কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
প্রতিনিধি, ২৪ জুলাই।।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের মুজিব নগর খ্যাত চরনজীর
গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া স্লুইজ খালটির মাঝ দিয়ে চলাচলাচলের রাস্তাটি (ক্রস
বাঁধ) কেটে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। চলাচলের ওই রাস্তার ভিতরদিয়ে দুটি পাইপ কালভাট
থাকা সত্বেও প্রায় ৩৫ বছর আগে নির্মিত রাস্তাটি কেটে দিলে চরনজীর, বলিপাড়া
পাড়া ও মাঝ গ্রামের হাজারো মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি দেখা দিবে। তাদের দাবি
মানুষের চলাচলের জন্য ওখানে একটি বক্স কালভাট কিংবা ব্রিজ করে দিয়ে বাঁধটি কাটা
হলে তাদের ভোগান্তি দুর হবে। এজন্য ওই গ্রমের দুই শতাধিক মানুষ স্থানীয় সংসদ সদস্য,
উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চরনজীব স্লুইজ খালটি দীর্ঘ দিন পর্যন্ত খনন হয়নি
৪৭/৪ নং পোল্ডারের এই খালটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লুগোল্ড প্রোগ্রামের
অর্থায়নে ১.০৬০ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। ওই খালের পশ্চিমে বেড়িবাঁধ থেকে
প্রায় এক’শ মিটার খাল বাঁধ দিয়ে সাবেক এক ইউপি সদস্য প্রভাব খাটিয়ে
বাঁধটি না কাটিয়ে মাছ চাষ করছে। অথচ হাজারো মানুষের চলাচলের রাস্তাটি (ক্রস
বাঁধিটি) কাটতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ঠিকাদারের লোকজন।
স্থানীয় চরনজীর গ্রমের আ: ললিফ হাওদার (৮০) জানান, শেখ মুজিবুর রহমান ৭২-৭৩ সালে
এই চরনজীরে ৬৮ পরিবারকে ৪৫ কড়া (১৩৫ শতাংশ) করে জমি দেয়। সেই থেকে এই
গ্রামটি মুজিব নগর খ্যাত। অথচ পরপর তিন বার শেখের মেয়ে প্রধানমন্ত্রী হলেও এই
মুজিব নগরে কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এখন নতুন করে চক্রান্ত করা হচ্ছে
চলাচলের রাস্তা কাটার জন্য। এই গ্রাম পত্তন হওয়ার কয়েক বছর পর আমাদের চলাচলের জন্য
সরকারী ভাবে এই রাস্তাটি করা হয়। পানি চলাচলের জন্য দুটি পাইপ কালভাট রয়েছে। এই
গ্রামে বর্তমানে তিনশত পরিবারের বসবাস। এখানে একটি সরকারী প্রাথমিক
বিদ্যালয়, একটি হাফিজি মাদ্রাসা রয়েছে। রাস্তাটি কেটে দিলে যোগাযোগ ব্যবস্থায়
ভোগান্তি হবে। তাই তাদের দাবি এখানে চলাচলের স্থায়ী একটি সমাধান করে বাঁধটি
কেটে দিলে তাদের কোন আপত্তি নেই। এরই মধ্যে ঠিকাদারের লোকজন তিন দফা মস্তান
নিয়ে এসে বাঁধ কাটতে আসেলেও বাসিন্দারের বাঁধায় তারা ফিরে আসে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ এখন ওই চক্রটি নিয়ে গভীর রাতে যে কোন সময় রাস্তাটি
কেটে দিতে পারে। আথচ খালটির শেষে দিকে প্রভাশী আমির হোসেন প্রায় এক’শ
মিটার বাঁধ দিয়ে ঘের করে মাছ চাষ করছে সেদিকে নজর নেই। গ্রামবাসী আরও
অভিযোগ করে বলেন, খালটি কাটার সময় চরনজীর গ্রামের খালপাড়ের রাস্তাটি পর্যন্ত
কেেেট খাল বৃদ্ধি করা হয়েছে। অথচ অপরপাড়ের বলিপাড়া গ্রামের মানুষ জন প্রভাবশী
বিধায় তাদের একটু জায়গাও খালে যায়নি। এছাড়া বলিপাড়া গামের রেজাউল সিকদার,
সেলিম সিকদার, আয়নাল সিকদার, সেরাজুল সিকদার, হারুন সিকদার ও মনির ঘরামী
লেকট্রিনের ময়লা পাইপ দিয়ে খালের ভিতরে ময়লা ফেলছে। এর ফলে পানি দুষন হচ্ছে। এই
খালের পানি দিয়ে মানুষ রান্নাসহ সকল কাজ করেন। এজন্য তারা ওই লেট্রিনের পাইপ গুলো
অপসারনের দাবী জানান। পটুয়াখালীর ঠিকাদার আল মামুনের প্রতিনিধি আনোয়ার
হোসেন বলেন, খালের খনন কাজ ওই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডেও মেম্বর সাইমুন রহমান
ইসমাইলকে দিয়ে করিয়েছি । খালের পশ্চিম পাশের বাঁেধ ব্যাপারে তিনি বলেন ওই পর্যন্ত
আমরা মাপে পাইনি তাই কাটা হয়নি। মেম্বর সাইমুনরহমান ইসমাইল বলেন, কাজ দেখভাল
আমরাই করেছি। তবে পশ্চিমের বাঁধটি না কাটার ব্যাপারে তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন
বোর্ড ওইটাকে পুকুর হিসেবে ব্যবহারের জন্য মাপ থেকে বাঁধ দিয়েছে। এব্যাপারে বালিয়াতলী ইউনিয়ন চেয়াম্যান মো: হুমায়ূন কবির বলেন, শতশত মানুষের চলাচলের ওই ক্রস
বাঁধটি (রাস্তা) বর্ষা মৌসুমে না কাটার জন্য পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের
নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে লিখিত দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন ওই ক্রস বাঁধটির
স্থানে একটি ইটের তৈরী কালভার্ট ও পাইপ থাকায় পানি চলাচলের কোন সমস্য নেই।
এছাড়া শুকনো মৌসুমে ওই স্থানে একটি আরসিসি কালভার্ট করা হবে বলেও তিনি
জানান। কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী সফিক জানান, ক্রস
বাঁধটি প্রায় ৩৫ বছর আগের মানুষের চলাচলের পথ হওয়ায় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের লিখিত
আবেদনে বাঁধ এখনই অপসারন করা হবে না। তবে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শুকনো মৌসুমে
মানুষের চলাচলের জন্য ওই স্থানে একটি বক্স কালভার্ট করে দিবে বলে লিখিত আবেদনে
জানান। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক,
বলেন, লিখিত অভিযোগ পাইনি তবে ইউনিয়ন চেয়াম্যানকে ব্যবস্থা নিতে বলে
দিয়েছি।