২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

আহসান উল্লাহ মাষ্টার চিরকাল বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল:

৯ নভেম্বর শহীদ আহ্সান উল্লাহ মাষ্টারের ৭২তম জন্মদিন । ১৯৫০ সালের এদিনে তিনি গাজীপুরের হায়দরাবাদ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন শিক্ষক, শ্রমিকনেতা, রাজনীবিদি, সমাজকর্মী, জননেতা ও দক্ষ সংগঠক। ছিলেন- নির্লোভ, নিরোগ, নিরহঙ্কার, পরোপকারী, ও দেশপ্রেমিক। জীবনভর দিয়েছেন সব সময় উজাড় করে, নেননি কিছুই। হৃদয় দিয়েই ভালোবাসতেন সুহৃদসহ ছোট- বড় সকলকেই, যে ভালোবাসা ছিল নিখাদ, নির্ভেজাল। রাগ, ক্ষোভ, জেদ, বিরক্তি, অসহিষ্ণুতা, মুখভার এগুলোর একটিও তার মধ্যে দেখা যায়নি কোনদিন। তাঁর কথায় কিংবা ব্যবহারে কেউ আহত হয়েছেন এমন নজির নেই। সংবাদকর্মীরা ছিল তাঁর খুব কাছের তথা আত্মীয়তুল্য আপনজন, যে কোন কাজে তাঁর কাছে কেউ সহযোগিতা চেয়ে পাননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না।

মানুষকে আপন করে কাছে নেয়ার অমিত ক্ষমতা ছিল তাঁর। তাঁর মধ্যে ছিল এমনই শক্তি, যে শক্তির ক্ষমতায় তিনি অল্প সময়ে যে কারো মন জয় করতে পারতেন। ফলে যেখানেই তিনি অংশ নিয়েছেন, সেখানেই ছিল তাঁর সর্বোচ্চ সাফল্য। তিনি ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা, গণমানুষের নেতা ও শ্রমিকদের বন্ধু। সততা ও নৈতিকতা ছিল তাঁর কাছে সবার আগে। এলাকার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও অস্ত্রের ঝনঝনানির বিরুদ্ধে। মাদকের বিরুদ্ধে তাঁর ছিল শক্ত অবস্থান। সব মিলিয়ে তিনি সাধারণ মানুষের এতোটাই আপনজন হয়ে উঠেছিলেন- যে গাজীপুরের রাজনীতিতে তাঁর বিকল্প অন্য কাউকে ভাববার কোন কথা কখনো চিন্তা করতে পারেছিলেন না স্থানীয় জনগণ। হয়তো এটাই হচ্ছে তাঁর জন্য কাল। সঙ্গত কারণেই তিনি হয়ে যান অনেকেরই ঈর্ষার কারণ। বিশেষ করে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি বিপরীত মেরুর অনেকেই তাঁকে সহ্য করতে পারছিলেন না। যার ফলে অকালেই প্রাণ দিতে হয়েছে তাঁকে। ঘাতকের বুলেট তাঁকে চিরতরে বিদায় দিয়েছে। কিন্তু মানুষের হৃদয়ে তিনি বেঁচে আছেন- চিরকাল বেঁচে থাকবেন নিজের সততার জন্যে।

শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় তিনি ছিলেন আপোষহীন। সত্যিকার অর্থেই তিনি একজন আদর্শ রাজনীতিবিদ। এ দেশের রাজনীতির ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি আমাদের দেশের আদর্শিক রাজনীতির এক উজ্জল নক্ষত্র।
তিনি বহুবিধ গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন, তিনি ছিলেন আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক, নির্বিরোধ, সহজ- সরল ও মিশুক একজন মানুষ। আমি নির্দ্বিধায় বলছি- জীবনে এমন কোনো পরোপকারী পরিচ্ছন্ন মানুষ দেখিনি, যাকে আহ্সান উল্লাহ মাষ্টারের কাছাকাছি বসানো যায়। খুব কাছ থেকে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারকে দেখেছি যে, বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন ও মানবিক গুণাবলিতে উজ্জীবিত শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার লোভ ও লালসার ঊর্ধ্বে থেকে শ্রমজীবী মানুষের জন্যে কাজ করে গেছেন। শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের সংগ্রামী জীবন, মনন ও আন্তরিক কর্মনিষ্ঠা ইতিহাসে চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তার কর্মময় জীবনী নতুন প্রজন্মের উৎসাহ, প্রেরণা, শক্তি ও সাহস যোগাবে। কাজেই শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের জীবনী নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। এই জন্যে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের কর্মময় জীবনী সকল স্তরের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন। শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের অপরিসীম অবদান কখনও আমাদের বিস্মৃতির গর্ভে হারিয়ে যাবার কথা নয়। তিনি সর্বদা সততার সাথে সাধারণ জীবন যাপন করতেন। কিন্তু এই স্বচ্ছ ও সৎ মানুষটাই এই নষ্ট সমাজে থাকতে পারলেন না। ২০০৪ সালের ৭ মে একদল সন্ত্রাসী টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সন্ত্রাসবিরোধী এক জনসভায় এই নির্ভীক জনপ্রিয় নেতাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু তিনি যুগে যুগে বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মে, আহ্সান উল্লাহ মাষ্টার’দের মৃত্যু নেই, তাঁরা মরতে পারে না। তাঁরা অজেয় চিরকাল আমাদের এই ভূবনে। আহ্সান উল্লাহ মাষ্টার চিরকাল বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে।

লেখক পরিচিতিঃ
লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল
(শিক্ষক, কলামিষ্ট, প্রাবন্ধিক ও সংগঠক)
সহ-সভাপতি, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি স্মৃতি পরিষদ
সভাপতি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি।
৫১,৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।

সর্বশেষ