৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নেতাশুণ্য বরিশাল আ’লীগ ! মামুন ও টুটুলই ভরসা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

শাকিব বিপ্লব ও হাফিজ স্বাধীন :
আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, জাহিদ ফারুক শামীম, সাদিক আবদুল্লাহ ও তালুকদার মো. ইউনুসের মত বাঘা বাঘা নেতা থাকলেও বরিশাল আ’লীগের হাল অবস্থা ভালো নয়। এই চার নেতা দায়িত্বের শীর্ষে থাকলেও দীর্ঘদিন মাঠে নেই, জনগণ থেকেও বিচ্ছিন্ন। অভিযোগ শতচেষ্টায় তাদের সাক্ষাত মেলে না। সেলফোনে কল দিয়ে ধরছেন তাদের সহকারী, দিচ্ছেন তাদের শেখানো অভিমত-অভিব্যক্তি।

ফলে বর্তমানে দলীয় কার্যক্রম বা অন্য কোন বিষয়াদী সমাধানে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের পক্ষে মাহমুদুল হক খান মামুন ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর কার্যক্রম সমাধানে দাওয়াই দিচ্ছেন নিরব হোসেন টুটুল। মাঠে থাকা বরিশাল মহানগর আ’লীগের এই দুই নেতা দুই মেরুর বাসিন্দা হলেও কাকতালিয়ভাবে উভয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন সম্প্রতিক বরিশাল রাজনীতির চিত্রপটে। দৃশ্যতো এই নেতাদ্বয় বরিশাল আ’লীগের হাল ধরে রেখেছেন, মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী থেকে সমর্থকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে মন্ত্রী ও মেয়রের প্রতিনিধির ন্যায় ভূমিকা রাখছেন।
উল্লেখ্য, দ্বিধাবিভক্ত বরিশাল আ’লীগে এক দিকে রয়েছেন হাসানাত পরিবার অন্যদিকে জাহিদ ফারুক শামীম একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। উভয় নেতাই বরিশাল ক্ষমতাসীন দলের চালিকাশক্তি এবং জেলা আ’লীগের নেতা এবং মন্ত্রী পদে অসিন রয়েছেন। কিন্তু জেলা আ’লীগের কর্ণধার বলে পরিচিত আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ স্থানীয় রাজনীতিতে প্রকাশ্য কোন ভূমিকা না রাখায় জাহিদ ফারুক শামীমই এখন সেই স্থান দখল নিয়ে জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সমর্থিত জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুস শক্তপোক্ত নেতা হলেও জাহিদ ফারুক শামীমের প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে সামনে আসছেন না।
পক্ষান্তরে মহানগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে শুরু থেকে প্রাচীর গড়ে তুলেছেন। ফলে এই চার নেতাকে নিয়ে বরিশাল আ’লীগে ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত হলেও সম্প্রতি সময় এদের কেহই মাঠে নেই আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। অদৃশ্য শক্তি করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে তারা সকলেই ঘর ধরেছেন।
যদিও নির্বাচনকালীন সময়ের চিত্রপট ছিল ভিন্ন। এ সময়কালে সাড়া শহর জুড়ে সাদিক আবদুল্লাহর নামে জয়জয়কার অবস্থা দেখা গিয়েছিল। গত সিটি নির্বাচনে সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র হিসেবে জয়লাভ করার পর তার রাজনৈতিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে বলে স্থানীয় রাজনীতিতে কথা চালু রয়েছে। মেয়র হিসেবে রাজপথে মাঠে থেকে এবং উন্নয়ন কমকান্ডের নানামুখি প্রকল্প হাতে নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের তেজ ও অস্তিত্ব প্রমান করে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন আলোচনার নতুন নতুন ধাপে। কিন্তু ক্রমন্বয় সেই নেতা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে দেখা সাক্ষাতের ক্ষেত্রে অঘোষিত নিময়কানুন জারি করেন।
শোনা যায়, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাতো দুরের কথা, এক সময় চারপাশে থাকা নেতাকর্মীরাই মেয়র সাদিকের সাক্ষাত পাওয়া সোনার হরিণের ন্যায়ে রূপ নিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, এই নেতার সাক্ষাত লাভ বা অভিযোগ-অনুযোগ অথবা কোন কাজের জন্য তার সান্নিধ্য লাভের ক্ষেত্রে গড়ে উঠে অদৃশ্য প্রাচীর। অবশ্য পরবর্তীতে সপ্তাহে দুই দিন জনসাধারণের সাথে মুখোমুখি হয়ে সুখ-দু:খ জানার নিয়ম চালু করলেও তার ধারাবাহিকতা বেশি দিন রক্ষা করতে পারেনি।
অন্যদিকে জাহিদ ফারুক শামীম ঢাকা কেন্দ্রিক বেশি থাকার পরও নির্বাচন আসলেই তাকে বরিশালে পাওয়া যেতো এবং সাক্ষাত পাওয়া ছিল সহজতর। প্রথমে মেয়র হিসেবে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আলোচনায় এসে রাজপথে ঘুরে ছিলেন। ব্যার্থ হয়ে আবার ঢাকামুখি হওয়ার পরও জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনের দলীয় মনোনয়ন লাভের পর নতুন রূপে আর্বিভাব ঘটে প্রবীণ এই নেতার। সাংসদ হিসেবে জয়লাভ এবং আচমকা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর এই নেতাও বরিশালে সাপ্তাহিক সময় দেয়া শুরু করেন। সময়ের ঘুরপাকে তিনিও নিজেকে সংকুচিত করে ফেলেন, তার সাথেও সাক্ষাত পাওয়ার দরজা অনেকটাই অবরুদ্ধ হয়ে পরে।

বিভিন্ন সূত্রের অভিমত, মেয়র হিসেবে সাদিক আর মন্ত্রী হিসেবে শামীম দু’জনেই প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার পর বরিশালের রাজনীতির মাঠ গরম করে তুলেছিলেন কিছু সময়ের জন্য। ভাবা হয়েছিল দু’জন দুই মেরুর বাসিন্দা হওয়ায় প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে জনপ্রিয়তা অর্জনে মানুষের সাথে মিশছেন, সাক্ষাত দিয়েছেন সহজেই।
সম্প্রতি নগর আ’লীগের কমিটি গঠন এবং সাদিক আবদুল্লাহ সাধারণ সম্পাদকসহ তার অনুসারীদের সমন্বয় প্রধান্য কমিটি থেকে জাহিদ ফারুক শামীম ছিটকে পরলে দুই নেতার প্রকৃত রূপের আত্মপোকাশ ঘটে। সাদিক আবদুল্লাহ কালীবাড়ি সড়কের বাসভবনের বাইরে সরাচর বাহির হতে বিরত থাকেন। জাহিদ ফারুক শামীম বরিশালে আসলেও করিম কুটির এলাকার বাসভবনেই অবস্থান নিয়ে তার অনুসারীদের সময় দিয়ে ফিরে যান ঢাকায়।
কিন্তু কি কারণে তাদের সাক্ষাত পাওয়া যায় না, তার কোন সদূত্তর না দিয়ে তাদের ব্যক্তিগত সহকারীদের অভিমত, নেতারা ব্যস্ত আছেন (!)

এমন ঘটনাও ঘটেছে বা ঘটছে মিডিয়াকর্মীরা সংবাদের প্রয়োজনে মন্ত্রী ও মেয়রের মন্তব্য সংগ্রহে যোগাযোগ করলে দুই নেতার সেলফোন থেকে ব্যক্তিগত সহকারীরাই অভিমত ব্যক্ত করে জানিয়ে দেয় এটাই নেতাদের ভাষ্য।
নাটকীয় না বিধাতার কি খেলা? করোনা ভাইরাস দেশের সংক্রমিত হলে এবং বরিশাল এ্যাটাক করলে বিশেষ করে সাদিক আবদুল্লাহর সাক্ষাত দেয়া বন্ধ করেন, থাকেন অদৃশ্যে। জাহিদ ফারুক শামীম করিম কুটির বাসভবনে থেকেই ত্রাণ দেয়ার মাধ্যমে তার অবস্থান জানান দিলেও প্রকাশ্য কোন কর্মসূচিতে অংশ নেননি বা এখনও নিচ্ছেন না। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয় করোনার কারণে নেতা হোম-কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। মন্ত্রীর পক্ষ থেকে এধরনের কোনো মন্তব্য না থাকলেও তিনিও বরিশালে অবস্থানকালে সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা যেতো।
সৃষ্টিকর্তার কি খেলা! সতর্কতা থাকার মাঝেও সাদিক আবদুল্লাহকে করোনা থেকে এখন মুক্ত থাকলেও জাহিদ ফারুক শামীম এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও তার করোনা আক্রান্ত নিয়ে চলছে এক ধরণের নাটকীয়তা। ঢাকার বিশ্বস্ত সূত্রগুলো জানায়, গত ২৮ জুন নমুনা টেস্টে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর করোনা আক্রান্তে পজেটিভ রেজাল্ট আসে। আবার চার দিনের মাথায় গত ২ জুলাই পুন:রায়ে টেস্টে তিনি করোনা মুক্ত বলে স্বাস্থ্য বিভাগ নিশ্চিত করে। যদিও নিয়মানুসারে এখন তৃতীয় টেস্টের রেজাল্টের অপেক্ষায় জাহিদ ফারুক শামীম ঢাকা বাড়িধারা ডিএসএসের নিজস্ব বাসভবনে হোম-কেয়ারন্টিনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এর ফলে ৩০ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় অধিবেশনে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী অনুপস্থিতি থাকেন।
এদিকে মেয়র সাদিক ও প্রতিমন্ত্রী শামীমের সাক্ষাত পাওয়া নিয়ে যখন আলোচনা-সমালোচনায় খোদ দলীয় নেতাকর্মীরাই ক্ষুদ্ধ এবং তাদের বাড়িমুখি যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন, তখন আলোচার বাইরে থাকা জেলা আ’লীগের কর্ণধর হিসেবে দাবিদার আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং জেলা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুসের ছায়া বরিশাল থেকে উধাও হয়ে যায়। সদ্য প্রয়াত সাহান আরা বেগমের মৃত্যুর পর তার স্বামী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে সম্ভবত সমসাময়িককালে প্রথম বরিশালে দেখা যায় জানাজা অনুষ্ঠানে। পুত্র সাদিক আবদুল্লাহ মায়ের দাফনকার্যে প্রকাশ্যে বের হয়েছিলেন। এর আগে আর একবার তাকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে জেলা প্রশাসনের ভিডিও কনফান্সের অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে দেখা যায়। সাহান আরা বেগমের দাফনের পর আবারও পিতা-পুত্র হয়ে পরেন গৃহবন্ধি।
এক কথায় বরিশাল রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে মন্ত্রী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর কথা বলা হলেও প্রকৃত অর্থে বরিশাল নিয়ন্ত্রণ করছেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম। অবশ্য দু’জনের অবস্থান দুই দিকে। একজন শহর অন্যজন গ্রামীণ জনপদ দেখভাল করছেন। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই দুই নেতার সাক্ষাত পাওয়াসহ তাদের যেকোন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে মাহমুদুল হক খান মামুন ও নিরব হোসেন টুটুলকে অগ্রণী ভূমিকায় থাকতে দেখা যাচ্ছে। এই দু’জন মহানগর আ’লীগের নেতা। সাদিক আবদুল্লাহর আস্তাভাজন লোক হিসেবে নিরব হোসেন টুটুলের ভূমিকা বর্তমান বরিশাল আ’লীগের রাজনীতিতে প্রসংশিত।
সাদিক আবদুল্লাহর অনুপস্থিতিতে গত তিন মাসকাল সিটি কর্পোরেশনের ত্রাণ কার্যক্রম মেয়রের পক্ষ হয়ে এই টুটুলই সার্বিক তত্ত্বাবাধয়নে ছিলেন। তাছাড়া মহানগর ব্যতিত জেলা আ’লীগের যেকোন কর্মসূচি সফলে টুটুলের তত্ত্বাবাধনে সম্পন্ন হচ্ছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তথা মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর সাথে সাক্ষাতসহ যেকোন বিষয় সমাধানে সেই টুটুলের মতামতই শেষ কথা। অর্থাৎ মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ তার রাজনৈতিক সহচর টুটুলকেই দিয়ে সহজেই সমাধান করতে সক্ষম হচ্ছেন সার্বিক সাংগঠনিক কার্যক্রম। ফলে সাদিক অনুকূলে টুটুল এখন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
একই অবস্থা পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের ঘরেও। তার অনুপস্থিতি অথবা তার যেকোন কর্মকান্ড সমাধানে মাঠে থাকছেন মহানগর যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন। করোনা দুর্যোগে মন্ত্রীর ত্রাণ কার্যক্রম এই নেতাই দেখভাল করেছিলেন। আবার মন্ত্রীর নির্দেশনা মাফিক কাকে কেন সহায়তা দিতে হবে, সাক্ষাতের সময়ও নির্ধারণ করতে প্রয়োজন হয়ে পরে মাহমুদুল হক খান মামুনের মতামত। তাছাড়া মামুন মন্ত্রীর পক্ষে বিভিন্ন অনুদান নিজেই বিতরণ করছেন।
কাকতালিয়ভাবে মামুন ও টুটুলের মাঝে একটি মিল খুঁজে যাওয়া গেছে। বর্তমান সময়ে আলোচিত এই দুই নেতা মন্ত্রী ও মেয়রের কোন প্রকল্পের সাথে যুক্ত নয়। বিশ্বাস্ততার প্রতীক বা সহাচর হিসেবে তারা দু’জনে দুই কুল সামাল দিচ্ছেন। যে কারণে মন্ত্রীর কাছে প্রয়োজনে মামুনের দরজায় দেখা যায় সদর উপজেলার নেতাকর্মী থেকে সাধারণ মানুষকে। একই চিত্রপটে সিটি কর্পোরেশনের কাজের তাগিদে অথবা মেয়রের সাথে সাক্ষাতের প্রয়োজনে কিনবা কোন অনুষ্ঠানে অনুমোদন লাভে টুটুলের সরন্নাপর্ণ হতে দেখা যায় কীর্তনখোলার তীরের আওয়ামী লীগ ঘরোনার মানুষজনককে। যে কারণে কথা উঠেছে বরিশাল প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগে চারজন বাঘ্রতুল্য নেতা থাকলেও তারা নেই মাঠে, তারা নেই সাক্ষাতে। এদের মধ্যে তিনজন রয়েছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে। তাদের শূণ্যতার মাঝে ভরসাই এখন মামুন ও টুটুল। ফলে বাস্তবতার নিরিখে ড্যামি নেতা হিসেবে এই দু’জনের গুরুত্ব বর্তমান বরিশালে বেশ আলোচিত।

সর্বশেষ