৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

বরিশালে প্রতিমন্ত্রীর ডেরায় ভাঙ্গনের সুর ?

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

শাকিব বিপ্লব:
বরিশালে ক্ষমতাসীন দলীয় রাজনীতিতে আভ্যন্তরীন দ্বন্দে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ক্ষমতার ভারসাম্য কেনো ধরে রাখতে পারছেন না, তার নেপথ্যের বহুমুখী কারন নিয়ে এখন কথা উঠতে শুরু করেছে। ঘরোয়া প্রতিদ্বন্দীতার রাজনীতিতে শক্তি সঞ্চয়ের পথে নিজ ঘরের অনুসারীদের মধ্যে রেষারেষি, একজন অপর জনকে প্রতিপক্ষ মনে করে ঘায়েল করতে মন্ত্রীর আস্থা অর্জনের লড়াইয়ে আপনাআপনি সৃষ্টি হয়েছে দুটি গ্রুপ। আবার পুরোনোদের অবমূল্যায়ন, নতুনদের সমাদর না করা নিয়েও দ্বন্দ প্রকট আকার ধারন করায় অনেকেই মন্ত্রীর সান্নিধ্যে থেকে ছিটকে পড়েছে । এই অংশটির অনেকেই নিস্ক্রিয় আবার কেউ ক্ষোভে তুষের আগুনে জ্বলছে। এ অবস্থায় প্রতিমন্ত্রীর শিবিরে ভাঙন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় রাজনীতির হিসেব নিকেশে বরিশাল বাণী’র কাছে অনেকের অভিমত, বরিশাল সদর আসনে অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল জাহিদ ফারুক শামীমের মন্ত্রীত্ব লাভ যেমন ছিলো অপ্রত্যাশিত, তেমন চমকও বটে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় দলীয় বিভাজনের রাজনীতিতে কোণঠাসা এই নেতা ঘুরে দাড়াবার সম্ভাবনা দেখা দেয় ক্ষমতার নতুন মঞ্চে উঠায়। অনেকে ভেবেছিলো, মন্ত্রীত্ব লাভে জাহিদ ফারুক শামীম হয়তো স্থানীয় রাজনীতিতে ঘুরে দাড়াবেন্ । এমন ভাবনাকে সামনে রেখে অনেকেই এই নেতার রাজনীতির সাথে যুক্ত হতে চেয়েছিলো। শুরুও হয়েছিলো তার বাড়িতে নিত্য নতুন মুখের আনাগোনা। অভিমত রয়েছে যে , বর্তমান সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ বিরোধীমনস্ক অথবা দলের মধ্যে অবমূল্যায়নে নতুন রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরীতে জাহিদ ফারুক শামীমকে যুতসই মনে করেছিলেন। কিন্তু রাজনীতির মারপ্যাঁচে মন্ত্রী এদের ধরে রাখতে অথবা কাছে টেনে আনতে ব্যার্থ হয়েছেন অনেক কারনে।
নানা সূত্রের অভিমত, প্রত্যাশা অনুযায়ী এই নেতা সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। মূলত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন এবং কাকে দিয়ে কোন পথ মিশ্রন করে এগুনো যায়, সেই বিবেচনায়ও তিনি নেতা হিসেবে নিজেকে পরিণত উপস্থাপনে সক্ষম হননি। আবার কারও ভাষ্য, সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা নিরেট ভদ্রতা ও রাজনীতির মারপ্যাচ বুঝে উঠতে না পারায় প্রভাব বিস্তারের সীমানার দীর্ঘতা সৃষ্টিতে অন্তরায় হয়ে দাড়ায়। এই ব্যার্থতার কারনে তার অনুগত্য-অনুসারীদের আগলে রাখতে শক্তপোক্ত ভূমিকায় যেতে না পারায় মাঠের রাজনীতিতে শক্তি ভারসাম্য তৈরী করতে ব্যার্থ হন বলে মনে করা হচ্ছে। তদূপরি অনূকুলের সমর্থিতরা দলীয় রাজনীতির চরম বৈরীতার মুখেও টিকে থাকার একধরনের লড়াইয়ে যেনো কূলহীন নদীর মাঝে ভেলা আকড়ে ধরে রাখার ন্যায় এই নেতার চারপাশে অবস্থান নিয়েছিলো।
পাশাপাশি এমন কথাও চালু রয়েছে, জাহিদ ফারুক শামীমের দুর্দিনে পাশে থাকা ব্যাক্তিরা সুদিনে মূল্যায়নের চেয়ার পাচ্ছেনা নতুনদের ভীড়ে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র এসব তথ্যের সাথে একমত পোষণ করে বলছে, মন্ত্রীত্ব পাওয়ার পরই রাজনীতিতে নেতৃত্ব প্রসারের শুরুতেই নিজ ঘরের খুঁটি ঘুণে ধরে তার চারপাশে পক্ষ-বিপক্ষ দুটি বলয় তৈরী হওয়ায়। সূত্রের তথ্যমতে, মন্ত্রীর আস্থা অর্জনে একদিকে ব্যাকুলতা, অন্যদিকে তার কান ভারী করায় নিজ ঘরেই শুরু হয় দুটি উপদল। সেখান থেকেই নিজ ঘরে দুটি স্রোতধারার নেতৃত্ব নিয়ে দেখা দেয় অনুসারীদের মধ্যে চরম বিভাজন। যা এখন প্রকট রূপ নিয়েছে, ঘরের খবর বাইরে চলে আসছে ক্ষোভের যন্ত্রনায়।
সূত্রের দাবী, তার ব্যাক্তিগত পিএস মোস্তাফিজুর রহমান রানা ও সরকারী নিয়োগপ্রাপ্ত এপিএস শফিকুল ইসলাম পিন্টু এই দুজনের নেতৃত্বে ভাগ হয়ে যায় মন্ত্রীর অনুসারীরা। সেখান থেকেই শুরু হয় একপক্ষ অপর পক্ষকে দমন। মন্ত্রী বিষয়টি আঁচ করতে পারলেও ততক্ষণে ভূলভাল বোঝানোর প্রতিযোগিতায় চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেননি বা পারছেন না। ফলে একটি গ্রুপ মন্ত্রীকে কব্জায় নিতে সক্ষম হওয়ায় নতুন রাজনীতির প্রত্যাশায় তার দুয়ারে উপস্থিত অনেক ত্যাগী নেতা এবং তাদের অনুগতরা ছিটকে পড়ে। এদের অনেকেই এখন জহিদ ফারুক শামীমের বরিশাল উপস্থিতিতে সাড়া দিচ্ছে না অথবা দলীয় প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়ার ভয়ে আসা যাওয়ার মধ্যে দিয়েই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে “যায় যায় পরান” এরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ায়।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বরিশাল বাণীকে বলছে, মন্ত্রীত্ব পাওয়ার পর তার রাজনীতির ভিন্ন একটি ধারা সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিলো। ওয়ার্ড ভিক্তিক অনেক রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব এবং যুব এবং ছাত্রনেতারা যেভাবে তার অনূক’লে আসতে স্রোতধারায় এই নেতা প্রতিটি স্তর সাজাতে পারতেন, যেতে পারতেন ঘরোয়া প্রতিদ্বন্দী যেকোনও নেতার সাথে শক্তি-সামর্থ্য পরীক্ষায়। সেই সাথে জনগনের মাঝেও নিজেকে নিয়ে আসতে পারতেন অনায়াসে নানান অবদান রেখে। কিন্তু সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি , উপরন্তু অনেক ত্যাগী নেতাদের বিমুখ করেছেন সন্দেহের চোখে দেখায় অথবা কাউকে বেশী প্রাধান্য দিতে গিয়ে।
অনেকেই মন্ত্রীর রাজনীতির বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও শেষান্তে যেতে হয়েছে ঘরের এই বিভাজনে ।  অভিযোগ রয়েছে , সরকারি হাতেম আলী কলেজের প্রভাষক পিন্টু ডেপুটেশনে এপিএস পদ পাওয়ার পরই মোস্তাফিজুর রহমান রানাকে মানতে পারছিলেন না। যুববয়সী রানা বরিশাল যুবলীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা হলেও জাহিদ ফারুক শামীমের দুর্দিনে ব্যাক্তিগত সহকারীরর ভ’মিকায় সবকিছু দেখভাল করতেন। অতীব ভদ্র ও বিনয়ী এই যুবক গত সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে মন্ত্রীত্ব লাভের পরবর্তী দীর্ঘ সময় জাহিদ ফারুক শামীমের গোপনীয় সবকিছুই যেমন নিয়ন্ত্রন করতেন, তেমন দলীয় নেতা-কর্মীদের ভালমন্দের বিষয়টি মন্ত্রীকে অবহিত করে অগ্রসর পথ তৈরী করতে শুরু করেন।
প্রচলন রয়েছে যে, এই যুবকের কারনে অনেকেই জাহিদফারুক শামীমের রাজনীতির সাথে যুক্ত হতে থাকেন। অন্যদিকে মিডিয়ায় মন্ত্রীকে ফোকাসে আনতে মিডিয়া কর্মীদের সাথে কৌশলী একটি সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন্। ফলে সঙ্গত কারনে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সবচেয়ে কাছের এবং বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিতি পায়। সেটাই কাল হয়ে দাড়ায় বলে শোনা গেছে। প্রায় ৬ মাস গত হয়েছে এই যুবক আর মন্ত্রীর সান্নিধ্যে যাচ্ছেন না। মন্ত্রীর দুয়ারে তার অনুপস্থিতির ব্যাখ্যায় মান-অভিমানের বিষয় তুলে ধরলেও মুখ খুলতে চাচ্ছেন না কী কারনে বা কার জন্য তিনি ছিটকে পড়লেন ?
বরিশাল বাণী’র অনুসন্ধানে জানা গেছে এরপরই শুরু হয় রানা গ্রুপের পতনের পালা। একে একে চরমোনাই এলাকার গিয়াস , ৪ নং ওয়ার্ডের সাকিব, ৫নং ওয়ার্ডের সাইদী, ৭ নং ওয়ার্ডের গিয়াস উদ্দিন. ২০ নং ওয়ার্ডের মনির, ২৩নং ওয়ার্ডের রিপন ও ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকার জুয়েলের ন্যায় ত্যাগী নেতারা এখন মন্ত্রীর রাজনীতিতে নিস্ক্রিয়। যদিও এদের মধ্যে কেউ কেউ মাঝেমধ্যে জাহিদ ফারুক শামীমের সাথে দেখা করতে আসেন, কিন্তু কোনো ভ’মিকায় বা কর্মসূচিতে উপস্থিতি চোখে পড়েনা।

বিশেষ করে বিএম কলেজ ছাত্রনেতা নূরে আলম সাইদী ও হাতেম আলী কলেজ ছাত্রনেতা সাইদুর রহমান মাহাদ মন্ত্রীর অনূকূলে ছাত্র-রাজনীতি নতুন বাতিঘর সৃষ্টির সম্ভাবনা জাগিয়েছিলো। এদের দুজনের রয়েছে ত্যাগের দীর্ঘ ইতিহাস। অথচ এখন সেই সাইদী নিশ্চুপ। মাহাদী কোনোভাবে টিকে আছেন মন্দের ভালো নিয়ে।
মন্ত্রীর ঘরের ভিতর থেকেই আওয়াজ পাওয়া গেছে , এখন এই নেতার সহোচার্য এবং বুদ্ধিদাতার যেনো অভাব নেই। কিন্তু সবাই নতুন মুখ। ব্যাতিক্রম শুধূ মাহমুদুল হক খান মামুন ও জিন্নাহ। প্রথমজন মহানগর আ.লীগের ত্যাগী নেতা, দ্বিতীয়জন জেলা ছাত্রলীগের পদধারী নেতা । এই দুজনের মধ্যে মাহমুদুল হক খান মামুন নিরেট ভদ্র এবং তিনিই মন্ত্রীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে ভ’মিকায় থাকলেও কোনো ঝুটঝামেলায় নেই। আবার মন্ত্রীও মহানগরের এই নেতার প্রতি ষোলঅনা দূর্বলতা পোষণ করায় তিনিই এখন স্থানীয় রাজনীতির দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

একাধিক সূত্রের অভিযোগ, মন্ত্রীর দুই সহকারীর মধ্যে বিশেষ করে হাদীস মীর আলাদীনের চেরাগের মতো রাতারাতি এখন বেশ অর্থ-বিত্তবৈভের মালিক। এই এপিওর হাল-হকিকত বিস্ময়কর! পক্ষান্তরে ত্যাগীরা প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির যোগফলে ছিটকে পড়ে খুঁজে পাচ্ছেনা অন্য কোনো যাত্রাপথ।
কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমান রানাসহ নূর আলম সাইদীর অনুসারীরা মন্ত্রীর কাছাকাছি থাকছেন কিন্তু হালে পানি পাচ্ছেন না। তবুও ডুবন্ত তরী টেনে তোলার ন্যায় জাহিদ ফারুক শামীমের সাথে থাকায় একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তারে পিন্টু-হাদীস গ্রুপের অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে।

সূত্র বলছে, ঘরের ভিতর এতকিছু ঘটছে কিন্তু মন্ত্রী কোনোকিছুই আমলে নিতে নারাজ। মন্ত্রী মনে করেন তিনি বরিশাল নয় , জাতীয় পর্যায়ের নেতা।
কারও কারও মন্তব্য তিনি স্বচ্ছ রাজনীতিতে বিশ্বাসী হলেও সাংগঠনিক দূরদর্শিতার অভাব তাকে যেভাবে পিছু টেনে ধরেছে তাতে আর এগুতে দিচ্ছে না, বা পারছেন না। এখন আরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে নিজ ঘরে ভাঙনের শব্দে।

এ বিষয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর ভাবনা জানতে এই প্রতিবেদক চেষ্টায় বহুমুখী যোগাযোগ করে ব্যার্থ হওয়ায় পরিষ্কার ধারনা পাওয়া গেলোনা আসলে তিনি ঘরের খবর কতটুকু রাখেন।

 

সর্বশেষ