২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

বরিশালে পুলিশের ঘাড়ে বন্দুক রেখে শত্রু দমনের চেস্টা !

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

শাকিব বিপ্লবঃ

বরিশাল শহরতলীর কাশিপুরের শাড়সী পল্লীতে মর্মদায়ক ঘটনা সোনিয়া কি আসলেই আত্মহত্যা করেছে ? নাকি অন্য কেউ তাকে পৃথিবী ছেড়ে যেতে প্ররোচিত করায় ওড়না দিয়ে ফাঁস দিয়েছিলো ? জাগ্রত দুটি প্রশ্নে এই মৃত্যুর রহস্যভেদে বিমানবন্দর থানা পুলিশ যখন কিনারা খুঁজছে তখন এক নাটকীয় পর্বের অবতারনায় প্রত্যন্ত পল্লীর এই ঘটনা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল।

পুলিশ তদন্তে যতনা অগ্রসর হয়েছে তার চেয়ে বেশী পিছু টেনে ধরছে কোনো একটি মহল পুলিশের পক্ষপাতিতের অভিযোগ তুলে। পুলিশ টাকা নিয়ে হত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে মৃত’র পরিবারের কাছে সন্ধিদ্ধ দুই কিশোর শান্ত ও নাহিদকে রক্ষায় গোপন আতাত করার নতুন এই অভিযোগ নিয়ে পুলিশ বিব্রত। অবশ্য নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে নয়, পাশ্ববর্তী কাগাশুরা গ্রাম থেকে এই আওয়াজ উঠেছে। কিন্তু অভিযোগকারী কে এবং পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা কোথায় তা কেউ নিশ্চিত করতে পারছে না।

ধারনা করা হচ্ছে, সোনিয়ার মৃত্যু ভিলেজ পলিটিক্সে জড়িয়ে যাওয়ায় এই ঘটনার বাস্তব সত্য উদঘাটনে কতোটা সহায়ক হবে তা নিয়ে সন্দীহান স্থানীয়রা। ইঙ্গিতপূর্ব কিছু আলামতে এই মৃত্যুর ঘটনা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করে পুলিশের ঘাড়ে বন্দুক রেখে কোনো একটি মহল তাদের প্রতিপক্ষ দমনে কৌশল নিয়েছে বলে কথা উঠেছে। সন্দেহজনক এমন আলাপচারিতা কাগাশুরা টু স্ড়াশী পর্যন্ত ঘুরেফিরে শোনা যায়।
উল্লেখ্য, সোনিয়া আক্তারের মৃতদেহ গত ২৬ মে সন্ধ্যায় নিজ ঘরের শয়নকক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। দক্ষিণ সাড়শী গ্রামের কৃষক আজহার খা’র কন্যা সোনিয়া স্থানীয় একটি মাদরাসার ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী । এই কিশোরীর রহস্যময় মৃত্যু আত্মহত্যা বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।

কিন্তু একদিন পর এই কিশোরীর দাফন শেষে তার পরিবার দাবী তোলে, সে স্বইচ্ছায় মৃত্যুর স্বাদ নেয়নি, তাকে প্ররোচিত করা হয়েছে। পাশ্ববর্তী চরবাড়িয়া ইউনিয়নের কাগাশুরা গ্রামের দুই যুবক শান্ত ও নাহিদ নামক অপর দুই কিশোর সম্ভবত সোনিয়ার সাথে প্রেম সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যার্থ হয়ে এমন কোনো ঘটনার জন্ম দিয়েছিলো যা সে সইতে পারেনি।
প্রমাণস্বরূপ আজহার খা’র দাবী, ঘটনার কিছুপূর্বে ঐ দুই কিশোর তাদের বাড়িতে একত্রিত আকস্ম্কি উপস্থিত হয়েছিলো। এসময় সোনিয়াকে বাসায় একা রেখে মাঠ থেকে গরু নিয়ে ফিরে দেখে তার কন্যা ঘরের আড়ার সাথে ঝুলছে। ময়নাতদন্ত শেষে সোনিয়াকে যারা দাফনপূর্বক গোসল কার্যাদি সম্পন্ন করে তাদের বর্ণনার আলোকে এখন বলা হচ্ছে তার দেহের কানে ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। যদিও শেবাচিমে ময়নাতদন্তের প্রক্কালে উপস্থিত বন্দর থানার এসআই দীপায়ন বড়াল ও ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ কমদা প্রসাদ সাহা এধরনের চিহ্ন দেখার কথা অবান্তর বলছেন। তদুপরি পুলিশ নিহতের পরিবারের দাবীর প্রেক্ষাপটে এই মৃত্যুর ঘটনায় প্ররোচনার মামলা গ্রহনের নিশ্চয়তা দিয়ে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার অপেক্ষায় থাকার পাশাপাশি এই অভিযোগের গুরুত্ব দিয়ে তদন্তে মাঠে নেমেছে ।
থানা সূত্র জানায়, ২৮ মে সোনিয়ার পিতা আজহার খা ও মামা হাকিমের অভিযোগ নিয়ে অনঢ় থাকলে পুলিশ কিশোর শান্তকে বিকেলে তার বাড়ি থেকে বিমানবন্দর থানায় নিয়ে আসে। পরদিন ২৯ মে বিকেল পর্যন্ত এই কিশোরকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে তার সরল স্বীকারোক্তি ছিলো , সোনিয়ার প্রতি তার দূর্বলতা ছিলো বটে কিন্তু কখনোই উত্যক্তের ঘটনা ঘটেনি। সেদিন বিকেলে সোনিয়ার বাড়িতে তাদের উপস্থিতির বিষয় প্রশ্নের প্রতিউত্তরে জানায়, প্রেম সম্পর্ক গড়ে তুলতে আবেগী হয়ে তার সেলফোন নাম্বার সংগ্রহর জন্য সেখানে যাওয়া হয়েছিলো। এসময় তাদের দুসম্পর্কের আত্মীয় নাহিদকে সাথে সঙ্গী করে একটি বাইসাইকেল চেপে ঐ বাড়িতে যাওয়া হয়। নাহিদের বাড়ি মুলাদী। শান্তদের আত্মীয়তার সূত্র ধরে কাগাশুরা গ্রামে তার বেড়াতে আসা।
সূত্র জানায়, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবুল কালাম আজাদ (দক্ষিণ) ও বিমানবন্দর থানার এসি নাসরিন জাহান শান্তকে পৃথকভাবে তাদের কার্যালয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করে। সন্তোষজনক উত্তরে শান্তকে আটকে আইনগত কোনো দিক না থাকায় ২৯ মে বিকেলে তাকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শান্তকে তার পিতা কামাল শেখ নিতে থানায় উপস্থিতিকালে স্বইচ্ছায় সাথে করে নাহিদকে নিয়ে আসে। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদে একই উত্তর মেলে যে, সে জানতো শান্ত সমবয়সী সোনিয়াকে ভালোবাসতো। কিন্তু সোনিয়ার মৃত্যুর পূর্বপর কোনো ঘটনায় তাদের হাত নেই।
অনুসন্ধানে নিশ্চি হওয়া গেছে, বিশেষ করে সোনিয়ার মামা যিনি এই মামলা নিয়ে দৌড়-ঝাপ করছেন সেই হাকিম শান্তকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারেননি। তিনি ক্ষুদ্ধ হন । এই প্রতিবেদকের কাছে তার ক্ষোভের কথা জানিয়ে শান্ত পরিবারের প্রতি পুলিশের দুর্বলতার অভিযোগ তোলেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্রের অভিন্ন অভিমত হচ্ছে, হাকিমকে পেছন থেকে কাগাশুরার একটি মহল উস্কে দেয়ায় এই অভিযোগ জোরালো রূপ দেয়ার চেষ্টা চলছে। কারন কী ? সেই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে জানা গেলো, সোনিয়ার বড় বোনজামাই রিয়াজ হওলাদারের সাথে শেখ পরিবারের গোষ্ঠীগত দীর্ঘদিনের দ্বন্দ রয়েছে। যদিও তারা এক অপরের নিকটাত্মীয়। বোনাই রিয়াজের বাড়িতে আসা-যাওয়া থেকেই সোনিয়ার পিছু নিয়েছিলো শান্ত। এই ঘটনা তার বোনজামাই রিয়াজ অবগত ছিলো এবং সোনিয়াকে সতর্ক করেছিলো শান্ত থেকে দূরত্ব থাকতে।
সূত্রের তথ্যমতে, সোনিয়ার মৃত্যুর পর শেখ পরিবারের সাথে পাশ্ববর্তী আরেকটি পরিবারের মনমালিন্যতায় রিয়াজ হাওলাদারের সাথে এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

ধারনা করা হচ্ছে, এই ঐক্য থেকেই শান্তর পরিবারকে দমাতে সোনয়ার মৃত্যুকে হত্যাকান্ডে রূপ দেয়াসহ পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে ভিন্ন একটি পরিবেশ তৈরীর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
যেখানে উচ্চপদস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা এই ঘটনায় শান্তকে জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নেয়াসহ সার্বিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে, সেখানে অর্থগ্রহনের বৈঠকের যৌক্তিকতা কতটুকু? পুলিশের ভেতরে এমন প্রশ্ন ওঠায় অভিযোগকারী কে, যিনি দেখেছেন অর্থ লেনদেনের বিষয়টি। এর উত্তর খুজে পাওয়া যায়নি, এমনকি অভিযোগকারী সোনিয়ার মামা হাকিমও এর স্বপক্ষে অকট্য কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।

অবশ্য অভিযোগের তীরবিদ্ধ দুই পুলিশ কর্মকর্তা চ্যলেঞ্জ দিয়ে বলছেন , এধরনের বৈঠক তো দূরের কথা , অর্থগ্রহনপূর্বক শান্তকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ অপপ্রচার মাত্র। তারাও চাচ্ছে এই অভিযোগের প্রমাণ। কারন বিব্রতকর এই পরিস্থিতিতে উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারাও এধরনের কথা-বার্তায় বিস্মিত বলে খবর পাওয়া গেছে । তারাও ধারনা করছে, মামলা তদন্তে ব্যাহত করার অপচেষ্টা হিসেবে এমন অপপ্রচার হতে পারে বলে সন্দেহের তালিকায় রেখে সত্যতা জানতে চাইছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদ বিন আলম পুলিশের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠায় নিজেই মাঠে নেমে পিতার উপর অভিমানে এই আত্মহত্যা কিনা তা এখন ঘটনার প্রেক্ষাপটে খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
সবকিছু বিবেচনায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, পুলিশের ঘাড়ে বন্দুক রেখে একটি মহল গোষ্ঠীগত দ্বন্দে প্রতিপক্ষকে দমনে সোনিয়ার মৃত্যুকে অস্ত্রের বারুদের ন্যায় ব্যাবহারে অগ্রসর হয়েছে । কিন্তু ঐ মহলটি কৌশলী পদক্ষেপে অবস্থান নেয়ায় প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য না রাখায় তাদের চিহ্নিত করা সহজতর হচ্ছে না।

পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত হতে তদন্তে মাঠে নেমে অপপ্রচারকারীদের প্রকৃত উদ্দেশ্যের নেপথ্যে এই বিষয়টিই এখন পর্যন্ত খুজে পেয়েছে। এমন তথ্য দিয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন যে, সোনিয়ার মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন সময় সাপেক্ষ। তবেই এনিয়ে মামলা কোনদিকে গড়াবে তা তদন্তের পাশাপাশি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

সর্বশেষ