৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘মরা সাপ’ পেটানো হচ্ছে…..

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

মামুন-অর-রশিদ: দুবাইভিত্তিক কানাডিয়ান কোম্পানি ‘এমটিএফই’ সাধারণ মানুষের প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে । প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রায় লক্ষ লক্ষ মানুষকে রাতারাতি ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। এই ভুয়া প্রতিষ্ঠানটি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের নামে গ্রাহকদের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়ে বন্ধ হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ইউনিট ইতোমধ্যে এনিয়ে তদন্ত শুরু করেছে, বেশ কয়েকজনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতারও করেছে। তবে এই কোম্পানির মালিক পক্ষরা বিদেশী কিংবা বিদেশে অবস্থান করায় তাদেরকে ধরাশায়ী করা যায়নি। যাদেরকে ধরা হচ্ছে তারা প্রায় সকলেই ভুক্তভোগী কিংবা ক্ষতিগ্রস্থ। যদিও প্রতারণার কার্যক্রমের সাথে তাদের সংস্লিষ্টতা রয়েছে। তবে আর্থিক ভাবে তারা অনেকেই তেমন একটা লাভবান নন।

অথচ প্রায় ষোল মাস আগে বাংলাদেশে প্রতারণার জাল ফেলে এমটিএফই। হাটি হাটি পা পা করে তার মহা প্রতারণায় রূপ নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক, বানিজ্য মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সহ সংস্লিষ্ট কর্তৃৃপক্ষের দু’একটি বিজ্ঞপ্তি ছাড়া শক্ত কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি এই ষোল মাসে। পালানোর পর যেন টনক নড়ে সকলের। ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভো্গীদের ধরাশায়ী করে যেন মরা সাপ পেটানো হচ্ছে।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এমটিএফইর ‘সিইও’ হতে হলে বিনিয়োগকারীকে প্রতি সপ্তাহে দুইজন নতুন গ্রাহক আনতে হতো। সেই নতুন বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ থাকতে হবে কমপক্ষে ৫০১ মার্কিন ডলার। ‘সিইও’রা যাদের যাদের বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করেছে, তাদের কাস্টমার সার্ভিসসহ সব ধরনের সাপোর্ট দিত।

ভুক্তভোগী এক যুবক গণমাধ্যমকে বলেছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। তিনি সিইও হওয়ার ক্যাটাগরিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন এবং তার অধীনে ১০০ জনের বেশি যুক্ত হয়েছিলেন। তার বিনিয়োগ ছিল ছয় লাখ টাকা। তিনি যখন লভ্যাংশের টাকা তুলতে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেন, প্রতিষ্ঠানটি তখনই সার্ভার আপডেট শুরু করে। ফলে কেউই কোনো টাকা তুলতে পারেননি।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন থেকেই এই প্ল্যাটফর্মটি নিয়ে সতর্কত করে আসছিল। কিন্তু মানুষ লোভের ফাঁদে পড়ে এখানে টাকা দিচ্ছিল। কিছুদিন আগে জানা যায়, এখানে যারা টাকা দিচ্ছিল তারা আর টাকা উঠাতে পারছিল না। এমটিএফই তাদের সিস্টেম বন্ধ করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আযাদ আলাউদ্দীন বলেন, ষোল মাসে কেন শক্ত ব্যবস্থা নিলোনা কর্তৃপক্ষ। সরকার কিংবা সংস্লিষ্ট কর্তপক্ষ দু’একটি দায়সাড়া বিজ্ঞপ্তি দেওয়া ছাড়া তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। যদি নিত তাহলে আজ এত মানুষকে পথে বসতে হতোনা এবং সরকারের এতগুলো টাকা পাচার হতোনা। তবে মানুষেরও সচেতন হওয়া দরকার। অতি লোভের আশায় নতুন কোন ফাঁদে পা দেওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের আগে শতবার চিন্তা করা উচিৎ।

সাধারণ মানুষদের প্রশ্ন হচ্ছে, আর কত মানুষ প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব হলে মানুষের ঘুম ভাঙ্গবে কিংবা কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে!

সর্বশেষ