৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
চাঁদপুরায় গণকের কথায় খলিলের মাংসের দোকানে তালা দিয়েছে মেম্বার ভোলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, ‌আহত ৩৫ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ বৃদ্ধাশ্রম "হেনরীর ভুবন" এর উদ্বোধন করলেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী ডা, দীপু মনি এমপি ঝালকাঠিতে র‌্যাবে হাতে সুজন হত্যা মামলার আসামি বাবা-ভাই গ্রেপ্তার গৌরনদীতে আওয়ামীলীগের দু পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা দিলুসহ রক্তাক্ত জখম-৫ কলাপাড়ায় মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত-১ উজিরপুরে ধান কাটতে গিয়ে হিট স্ট্রোকে কৃষকের মৃত্যু উজিরপুরে জেলেদের মাঝে বৈধ জাল ও ছাগল বিতরণ করেন - রাশেদ খান মেনন এম পি পাথরঘাটায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট, মেপে পানি পান করতে হয় বাসিন্দাদের কলাপাড়ায় মাছ চুরি করতে দেখে ফেলায় যুবককে কুপিয়ে জখম

সরকারী বরাদ্দ বিহীন পথচলার ৫১ মাসে বিসিসি

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

বাণী ডেস্ক: নিজস্ব আয়েই চলছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে মিলছে না কোনো সরকারি বরাদ্দ। ৫১ মাস ধরে চলছে এ পরিস্থিতি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও থোক বরাদ্দের নামে সামান্য কিছু সহায়তা এলেও তা দিয়ে হচ্ছে না কিছুই। চলমান পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন বাড়ছে বিসিসির দেনা, তেমনি অর্থ সংকটে আটকে আছে জরুরি অনেক উন্নয়ন প্রকল্প।
পানি সরবরাহ লাইন স্থাপনের অভাবে অকার্যকর হয়ে আছে ৫ বছর আগে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট।
নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৪ বছর আগে বর্তমান পরিষদ দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে নগর ভবন।
বিষয়টি অবশ্য ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন সিটি মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন,
বহু আগেই সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে নিজস্ব আয়ে চলার যোগ্যতা অর্জনের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হয়তো বরিশালকে দিয়েই সেই উদাহরণ সৃষ্টি করতে চান তিনি। আমরাও সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। ইতোমধ্যে অনেকটাই স্বাবলম্বী হয়েছে বিসিসি। নগরের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও প্রয়োজনীয় সংস্কার চলছে বিসিসির নিজস্ব আয় অর্থাৎ নগরবাসীর ট্যাক্সের টাকায়। উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে টাকা পেলে হয়তো নগরের চেহারা আরো সুন্দর হতো। কিন্তু টাকা না পেলেও যে এখানে উন্নয়ন থেমে নেই সেটাই তো আমাদের অর্জন।
এক হিসাবে দেখা গেছে, বিসিসির নিজস্ব আয় বছরে গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকা। যদিও গত অর্থবছরে এ আয় উন্নীত হয়েছে ৭৫ কোটিতে। নগর ভবনের ইতিহাসে এটিকে সর্বোচ্চ উল্লেখ করে মেয়র সাদিক বলেন, আত্মনির্ভর হতে আয় বর্ধক নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছি আমরা। চলতি অর্থবছরে এ অঙ্ক আরও বাড়বে।
নগর ভবনের একটি সূত্র জানায়, আয় হওয়া এ ৭৫ কোটি টাকার মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস খাতে বছরে ব্যয় হয় ৩৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
এছাড়া জ্বালানিসহ অন্যান্য ব্যয় মিলিয়ে এ খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫ কোটি ৪৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার মতো (২০১৯-২০২০ অর্থবছরের হিসাবে)। বাকি টাকা দিয়েই চলছে সড়ক সংস্কারসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজ। প্রথমদিকে যখন বার্ষিক আয় ছিল ৪০-৪৫ কোটি টাকা তখন বাস্তবিকভাবেই সংকটে পড়েছিল বিসিসি। আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সংকট কাটিয়ে ওঠা গেলেও সমস্যা দেখা দিয়েছে বকেয়া দেনা পরিশোধ এবং বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে।
নগর ভবন সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ৪টি ও চলমান অর্থবছর মিলিয়ে বিসিসিকে মোট ৪২ কোটি ৭০ লাখ ৪৭ হাজার টাকা দিয়েছে সরকার। তার মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এবং বিশেষ থোক মিলিয়ে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩২ কোটি ১৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা। বাকি ১০ কোটি ৫৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে করোনা প্রতিরোধ, ভিটামিন এ ক্যাম্পেইন, জš§ নিবন্ধন এবং মশক নিধনসহ বিভিন্ন নির্ধারিত খাতে। বরাদ্দের পরিমাণও কমেছে প্রতি বছর। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যেখানে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি ৫৬ লাখ সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ কোটি ৯৮ লাখে।
বিসিসির হিসাব শাখার কর্মকর্তা তামিম আহম্মেদ বলেন, রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজেদের আয় দিয়েই এখন নগরীর উন্নয়ন ও সংস্কার কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। তবে এটি প্রয়োজনের সমুদ্রের তুলনায় এক ঘটি পানির মতো।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে হিসাব শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে নগর ভবনের দেনার পরিমাণ ৩শ কোটি টাকারও বেশি। সাবেক মেয়র প্রয়াত আহসান হাবিব কামাল দায়িত্ব ছাড়ার সময়ই প্রায় পৌনে ৩শ কোটি টাকা দেনা রেখে গেছেন। বাকিটা যোগ হয়েছে বর্তমান পরিষদের সময়ে। নতুন উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন ও বিগত সময়ে সম্পন্ন হওয়া উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিপরীতে সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ার কারণেই মূলত সৃষ্টি হয়েছে এমন পরিস্থিতি।
চলমান পরিস্থিতিতে সড়ক সংস্কারসহ অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কিভাবে চলছে জানতে চাইলে প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা মো. মকসুমুল হাকিম রেজা বলেন, ৫ বছর মেয়াদি টেকসই সড়ক নির্মাণ চুক্তির আওতায় আমরা ইতোমধ্যে নগরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোর নির্মাণ ও সংস্কার প্রায় সম্পন্ন করেছি। ছোট ছোট সড়কগুলোর সংস্কার-নির্মাণ চলছে। নির্মাণ করা হয়েছে ১১টি ব্রিজসহ কালভার্ট ও ড্রেন। এছাড়া বধ্যভূমি কমপ্লেক্স, অবিকল নকশায় অশ্বীনি কুমার হল সংস্কার, ৩টি সেবক কলোনি এবং ৩টি নতুন পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। চলছে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ঘিরে কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ। নিজস্ব আয়ে চলতে গিয়ে কেবল জরুরি কাজগুলোই হচ্ছে তা নয়, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণসহ ছোটখাটো উন্নয়ন প্রকল্পও বাস্তবায়ন করছি আমরা।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, মন্ত্রণালয়ে আমাদের ৫টি উন্নয়ন প্রকল্প জমা রয়েছে। সড়ক উন্নয়ন-জলাবদ্ধতা নিরসন ও বর্র্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে ৬৮৩ কোটি, ২টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ব্যবহার উপযোগী করাসহ নতুন ওভারহেড ট্যাংকি এবং পানি সরবরাহ লাইন স্থাপনে ৩৯ কোটি ৬০ লাখ, এলইডি সড়ক বাতি স্থাপনে ২৭৬ কোটি, নগরীর অভ্যন্তরে থাকা খালগুলো পুনরুদ্ধার-সংস্কার-বাঁধ ও খালের দুপাড়ে সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যে ২ হাজার ৬শ কোটি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছি আমরা। এরমধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতের কাজে অর্থায়ন করবে ভারত সরকার। তবে এটিরও অনুমোদন দেবে মন্ত্রণালয়। এসব প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে বরিশাল নগরীর চিত্র পালটে যাবে।
পুরো বিষয়টি নিয়ে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্বনির্ভর হতে বলেছেন বলে সেই লড়াই লড়ছি আমরা। তিনি আমাদের অভিভাবক। কী করলে আমাদের ভালো হবে সেটি তিনিই সবার চেয়ে বেশি ভালো জানেন। আমরা তার দিকেই তাকিয়ে আছি।
আকতার ফারুক শাহিন, ব্যুরো চীফ, দৈনিক যুগান্তর।

সর্বশেষ