২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

অসাধারণ ছোটগল্প ‘যবনিকা’

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

যবনিকা
—শুভজ্যোতি মন্ডল মানিক

অখিল ও প্রমিতার সম্পর্ক বহুদিনের।কিশোর-কিশোরী বয়স থেকে একে অপরকে জানে শোনে।সময়ের পাল্লা ভারী হতে হতে অখিল তাগড়া যুবকে পরিনত আজ,প্রমিতা পরিপক্ক যৌবনে পা দোলাচ্ছে।দুজন দুজনকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার স্বপ্ন গোনে;বিপত্তি ঘটে অখিলের পরিবার প্রমিতাকে বৌ হিসেবে কল্পনা করতে পারেনা।ইতিমধ্যে অখিলের পরিবার দু-একখানা সম্বন্ধ দেখেছে,১৩ ই মাঘ শুভ কাজের ভালো দিন।অখিল-প্রমিতার দেখা সাক্ষাৎ হয়না অনেক দিন।একদিন ভর দুপুরে প্রমিতার বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে অখিল বাড়ি ফিরছিলো;প্রমিতা অখিলকে দেখতে পেয়ে এক দৌড়ে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে।ভাগ্যিস রাস্তায় কেউ ছিলোনা তখন;পলার মা কোন ফাঁকে বাড়ির ভিতর থেকে একপলক দেখে ফেলে দুজনকে।প্রমিতা কাঁদ স্বরে জিজ্ঞেস করে,তোমার বাড়ীর লোক নাকি তোমার জন্য মেয়ে দেখছে?অখিল আমতা আমতা করে না জানার ভান করে।তুমি যদি অন্যকারো সাথে গাঁটছড়া বাঁধো,সেদিনই কিছু একটা করে ফেলবো বলে প্রমিতা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।পলার মা ঢোল পেটানো মহিলা অখিল বাড়ি ফেরার আগেই অখিলের বাবা মায়ের কান ভারী করে।অখিলের বাবা দয়ারাম বসু,সময় ক্ষেপণ না করে উৎপলার সাথে ১৩ ই মাঘ অখিলের বিয়ের দিন ধার্য করে।উৎপলা মহিরামপুর গায়ের রায় বাড়ীর মেয়ে।দেখতে শুনতে ভালোই,গুনবতী কি না জানা নাই।অখিলের বিয়ের কাজ সম্পন্ন;বিয়ের পরের দিন অখিলের বাড়ীর লোকজন প্রমিতার বাড়ীর দিকে মাইক ফিরিয়ে হিন্দি গানের ক্যাসেট বাজায়।এদিকে প্রমিতা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ১৪ বছরের সম্পর্ককে আত্মহত্যার মাধ্যমে জলাঞ্জলি দেবে।ভাগ্যের পরিহাসে ১৪ ই মাঘ গভীর রাতে গোয়াল হতে গরুর দড়ি নিয়ে পাশের বাড়ির ঝড়ে নুইয়ে পড়া আমগাছটায় গলায় দড়ি দেয় প্রমিতা।মরে গিয়ে অমানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে যায় প্রমিতারা ভালোবাসায় বাঁচে মরে।একই গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় অখিলের কানে খবরটা পৌঁছাতে খুব বেশি সময় লাগেনি।শেষবারের মতো প্রমিতাকে চোখের দেখা দেখতে আসছিলো কি না কে জানে?প্রমিতার বাড়ীতে কান্নার রোল ওঠে;প্রমিতার কোন ভাই নাই;বোনদের মধ্যে প্রমিতাই বড়।পুলিশ এসে প্রমিতাকে নিয়ে যায়;ডোমের ছুড়িতে হয় ক্ষত-বিক্ষত। ডোমকে জিজ্ঞেস করলে জানা যেতো প্রমিতার বুকে জমে যাওয়া রক্তে কি তখনো অখিলের নাম লেখা ছিলো?লাশ পোস্টমর্টেমের পর বাড়িতে নিয়ে আসে;বাড়ির সামনের দিকে রাস্তার পাশে চিতায় তোলা হয়।শ্মশান বন্ধুরা যতোবার মুখাগ্নি করার চেষ্টা করেছে ততোবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে প্রমিতার মরা দেহ।কাঠ দিয়ে যতোবার চাপা দেয়া হয়েছে কাঠ সরিয়ে উঠে বসেছে।চিতায় আগুন জ্বলছেনা,ঘনবাতাস বইছে চিতার চারিপাশে;এক-এক বার আগুন জ্বলে উঠবে বলে মনে হলেও ধুপ করে নিভে যায়।লাশ চিতার মাঝে গড়াগড়ি দেয়।পাঁচ ঘন্টার আগুন ধরানো প্রচেষ্টায় শরীরে কেবল ফোসকা জমেছিলো।শেষ পর্যন্ত শ্মশান বন্ধুরা মধ্যমাঠে নিয়ে মাটি খুঁড়ে পুতে রাখে লাশটাকে।প্রেমের মরা জলে ডোবে না, আগুনেও কি পোড়েনা?প্রশ্নটা থেকেই যায়।মূলত প্রমিতা অশরীরী আত্মায় পরিনত হয়েছে।ইদানীং ভর সন্ধ্যা বেলা প্রমিতাকে রাস্তা ঘাটে হেঁটে যেতে দেখা যায়।মাঝ রাতে অখিল অখিল বলে কাঁদে;অখিলের বাড়ীর সীমানায় ঘোরাফেরা করে প্রমিতার আত্মা।অখিলের ঘরে ঢুকতে চায় অমাবস্যা তিথীতে।ভোর রাতে মিষ্টি করে অখিল বলে ডাকে।অখিলের স্ত্রী মাঝেমধ্যে প্রশ্ন করে, মহিলা কন্ঠে কে তোমায় ডাকে?


শুভজ্যোতি মন্ডল মানিক(শিক্ষক)
মোড়েলগঞ্জ-বাগেরহাট।

সর্বশেষ