এম লোকমান হোসেন :
চরফ্যাশন উপজেলা কুকরী-মুকরী ইউনিয়নের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ চর পাতিলা৷ বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদী বেষ্টিত এ চরে নেই কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয়৷ একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে অপ্রতুল৷ স্থানীয়ভাবে কয়েকজন শিক্ষিত যুবক সে চরে চলতি বছরের প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠা করেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়৷
সরেজমিনে দেখা যায়, কুকরী-মুকরী ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ড মিলিয়ে চর পাতিলা৷ শরিফ পাড়া, পূর্ব বাজার, পশ্চিম বাজার, পাতিলা, উত্তর কান্দি নামে ৫ টি গ্রামের মধ্যে প্রায় ১ হাজার পরিবারে, শিক্ষা স্বাস্থ্য বঞ্চিত ৫ হাজার দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষের বসবাস৷ তার মধ্যে স্কুলগামী শিশুর সংখ্যা ২ হাজারের উপরে ৷ এরমধ্যে কিছু সংখ্যক শিশু প্রাইমারী গন্ডি পার হলেও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা না থাকায় কাঙ্খিত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা৷ কোন মা-বাবা তার সন্তানকে মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়ার স্বপ্ন দেখলে তেতুলিয়া নদী পাড়ি দিয়ে জল-স্থল মিলিয়ে ২ ঘন্টা সময় অতিবাহিত করে ৮ কিঃমিঃ দুরে দক্ষিণ আইচা থানায় আসতে হবে৷ কুকরী মুকরী যাওয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা এর চেয়েও নাজুক৷ দক্ষিণ আইচা থানায় রেখে সন্তানকে মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ালেখা করানোর ইচ্ছা থাকলেও প্রতি মাসে গুনতে হবে হাজার হাজার টাকা৷ আর্থিক অনটনের কারনে, তা আর সম্ভব হয়ে উঠে না৷ তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়৷ নতুন প্রতিষ্ঠিত চর পাতিলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিই তাদের শেষ ভরসা৷ এ প্রতিষ্ঠানকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছেন চর পাতিলা গ্রামবাসী৷
চর পাতিলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এইচ এম ইউসুফ বলেন, এ চরে কোমলমতি শিশুদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনার জন্য কুকরী মুকরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহোদয়ের একান্ত প্রচেষ্টায় আজ আমরা এই পর্যন্ত এসেছি৷ এখন বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৮০ জন৷ করোনা ট্রাজেডি থেকে মুক্তি পেলে ছাত্র-ছাত্রী বসানোর জায়গা দিতে পারব না৷ আমাদের বিদ্যালয়ের ঘর নেই, জরাজীর্ণ একটি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠদান চালাচ্ছি৷ সমাজের বিত্তবান, কোন প্রতিষ্ঠান বা সরকারি-বেসরকারি অনুদান অথবা সাহায্য পেলে বিদ্যালয়ের ঘর, আসবাবপত্রসহ মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবো৷
চর পাতিলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও কুকরী-মুকরী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন জানান, চর পাতিলা শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা খুবই নাজুক৷ একটিমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও নেই মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে
নিরক্ষরতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন কৌশল খাটিয়ে বাল্যবিয়ে, এমনকি অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা ৷ এ চরে ১৩/১৪ বছরের একজন মেয়ে তার বাবার পরিবারে অভিশাপ৷ যা পড়া লেখার মধ্যে নিমজ্জিত থাকলে হয়তোবা হতো না৷ আমি কর্তৃপক্ষের নিকট চরাঞ্চল ক্যাটাগরিতে, চর পাতিলায় আরো একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন, শতভাগ নিরক্ষর মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জোর দাবি জানাচ্ছি৷
চরফ্যাশন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে৷ চর পাতিলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির যেকোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করতে আমি বদ্ধপরিকর৷
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন, ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের পরিচালক অধ্যক্ষ মনির আহমেদ শুভ্র গত ১৯ মে ২০২০ ইং তারিখে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায়, করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ চর পাতিলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রতিজনকে ২ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন৷ পরে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন শেষে সার্বিক উন্নয়নের আশ্বাস দেন তারা৷