নাঈমুল ইসলাম খান: [১] আদিত্য কবীর আর নেই। দৈনিক আজকের কাগজ ও ভোরের কাগজের সে ছিলো অন্যতম সেরা, সৃজনশীল প্রতিভা। ০৯ ডিসেম্বর সকালে তার ঘুম ভাঙেনি। আর ভাঙবেও না।
[২] ১৯৯১ সালে দৈনিক আজকের কাগজে আন্তর্জাতিক ডেস্কে সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করতো আমাদের আদিত্য কবীর সেতু।
[৩] আদিত্য কবীরের সরাসরি বস ছিলো, বর্তমানে বিবিসি লন্ডনে কর্মরত সাংবাদিক সুকল্প গুপ্ত পুলক। পুলক আদিত্যের কাজে সব সময় ছিলো প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিছুদিন আগে জুমে পুলকের সাথে কথা হচ্ছিল, তখনও পুলক গুপ্ত আদিত্য কবিরকে স্বপ্রশংস স্মরণ করলো। আমাকে বললো, ‘আদিত্য কবীরের লেখায় আমাকে হাত দিতে হতো না’।
[৪] সেই আদিত্য কবীর, সেই ৯১ সালেই একদিন আমাকে বলল, ‘নাঈম ভাই, ডেস্কে কেবলই ট্রান্সলেশনের (অনুবাদের) কাজ করতে একঘেয়ে লাগছে। কিছু কিছু স্টোরি আমাদের পাঠকের আগ্রহ সঙ্গে নৈকট্য তৈরি করতে অর্থাৎ তাদের আগ্রহ বাড়িয়ে দিতে আমরা তেমন স্টোরি রিক্রিয়েট করতে চাই।
[৫] আদিত্য কবীর বলল, ‘নিয়মিত ডেস্কে বসে এইরকম ব্যতিক্রমী কাজ করা দুরূহ। আমাদের কয়েকজনকে আলাদা করে দেন, আলাদা জায়গা করে দেন। আমরা ট্রান্সক্রিয়েশনের স্বতন্ত্র বিভাগ চালু করি।’
[৬] ঝিগাতলার সেই অফিসে স্থানাভাব ছিলো। কিন্তু তারা আনন্দের সাথেই অফিসের পিয়ন ড্রাইভারদের থাকার জন্য নির্ধারিত গ্যারেজের ছাদের রুমে ছোট একটা অংশ পেয়েই খুশি।
[৭] এই আদিত্য কবীর, সেই সঞ্জীব চৌধুরী, তারা তাদের সকল প্রতিভা ও সৃজনশীলতা দিয়ে ‘নতুন ধারার দৈনিক’ আজকের কাগজ ও ভোরের কাগজকে পাঠকের কাছে ইন্টারেস্টিং ও আর্কষণীয় করতে এবং অগণিত মানুষের প্রিয় পত্রিকা করে তুলতে বেহিসেবি কাজ করেছে এবং শ্রেষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে।
[৮] দৈনিক ভোরের কাগজের পর আদিত্য কবীরের সাথে দেখা হতো কম কিন্তু সেরা বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিকে কাজ করছিলো অনেক বছর সৃজনশীল শীর্ষ দায়িত্বে। সে একানব্বইতে যেমন ছিলো, মৃত্যুর আগেও ছিলো একই রকম আদরণীয়। তার মৃত্যু বাংলাদেশের কবিতা, গল্প ও শিল্প জগতে বড় ক্ষতি করল।
[৯] বাউন্ডুলে অথচ পরম প্রতিভাবান এবং সকলের প্রিয় আদিত্য কবিরের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রয়াত কবি হুমায়ন কবির এবং মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের প্রাক্তন প্রভোস্ট, সুলতানা রেবু। আদিত্যের অপর ভাই অভীক এবং দুই বোন খেয়া ও অপর্না।
অনুলেখক: সাংবাদিক, নাজমুল হক মুন্না (উজিরপুর বরিশাল )