৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা চলছে : এসএম জাকির হোসেন উপজেলা নির্বাচন: ভোলার তিন উপজেলায় ৩৭ প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ ভান্ডারিয়ায় ককটেল ফাটিয়ে ও কুপিয়ে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই বরগুনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনেই আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রার্থীদের পাথরঘাটায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা, ৪ জনকে শোকজ কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে এল মৃত ডলফিন বাউফলে গর্ভে থাকা ভ্রূণ নষ্ট, স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে প্রেমিকের বাড়িতে তরুণীর অনশন ভোলায় পুলিশে চাকুরী দেওয়ার নামে প্রতারণা : প্রতারক আটক উপজেলা নির্বাচন : গৌরনদীতে তিন প্রার্থীর ব্যতিক্রর্মী প্রচারণা ববিতে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায়

আসুন গাড়ির হর্নকে ‘ভেপু সন্ত্রাস’ হিসেবে গণ্য করি

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

পশ্চিমাদের কথা বাদ দিয়ে পূর্বদেশের কথা বলি৷ জাপানে একমাসে দুটি প্রদেশের অনেক জায়গায় গিয়েছি৷ দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৮ মাস ছিলাম৷ সিঙ্গাপুর পুরাটা ঘুরে দেখেছি৷ চীনে ছিলাম৷ কোন গাড়ির একটা হর্ন শুনিনি৷ আপনারা বলতে পারেন- এরা উন্নত দেশ৷ তাদের মাধ্যমে এ ধরণের পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব৷ তাহলে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামের কথা বলবো৷ সেখানেও হর্ণের শব্দ শুনতে পাবেননা৷ গত বছর সেপ্টেম্বরে দিল্লী ছিলাম৷ কুটনৈতিক এলাকা চাণক্যপুরীতে একটা হর্ণও শুনিনি৷ অন্য এলাকাতেও নেই বললেই চলে৷
অথচ আমাদের দেশে রাস্তায় নামবেন৷ দেখবেন সব গাড়ি একযোগে হর্ন বাজাচ্ছে৷ রাস্তায় নামতে হবেনা৷ অলিগলির যেখানেই বাসাবাড়ি থাকুক৷ হর্নের শব্দ বেডরুম থেকে ঠিকই পাবেন৷ রীতিমতো হর্ন দেয়ার প্রতিযোগিতা চলে৷ ময়লা আবর্জনার কথা নাই বা বললাম৷ বলা হয়, রোড ইজ দ্য ট্রু রিফ্লেকশন অব কান্ট্রিস সিস্টেম৷ কোন দেশের মানুষের আচার-ব্যবহার, আইন- কানুন মানা না মানার বিষয়টি রাস্তায় প্রতিফলিত হয়৷ আমার ধারণা আমাদের মতো মাথাপিছু এরকম একটি দেশও পাবেননা যেখানে সবাই অকারণে এভাবে হর্ন বাজায়৷
ইন্ডিয়ার হর্ন নিয়ন্ত্রণে খুব কড়া পদক্ষেপ নিয়েছিলো পুলিশ৷ ইউটিউবে অনেক ভিডিও পাবেন৷ একটা ভিডিওতে দেখলাম৷ পুলিশের হাতে ভেপু৷ একটি গাড়ি থেকে হর্ণ বাজানো হলে ড্রাইভার হেলপারকে আটক করা হয়৷ হেলাপারের হাতে ভেপু দিয়ে দিয়ে বলা হলো ড্রাইভারের কানে লাগিয়ে জোরে বাজাতে৷ কয়েকটা ভেপু ড্রাইভারের কানে দেয়ার পর ড্রাইভারের রিঅ্যাকশন দেখার মতো৷ অামি হাসতে হাসতে শেষ৷ হোয়াট অ্যা ভেপু থেরাপি! ওই ড্রাইভার এই জনমে ভেপু বাজাবে বলে মনে হয়না৷
এবার বাংলাদেশের কথায় অাসি৷ সচিবালয় ও তার আশপাশে হর্ন নিষিদ্ধ ৷ মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্টে জরিমানাও করা হয়৷ অথচ পরিন্থিতি যেই সেই৷ কোন পরিবর্তন নেই৷ হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ, মন্দির কোন কিছু এদের কাছ থেকে ছাড় পায়না৷ এদের আমি ভেপু সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই৷
টিভিতে দেখলাম, হর্ন না বাজাতে অনুরোধ করে একজন সম্মানিত এমপি গান গেয়ে শোনাচ্ছেন৷ এই ভেপু সন্ত্রাসীদের গান শোনানোটা ইন্টারেস্টিং৷ সন্ত্রাসীদের জন্য গান৷ গান গাওয়ারও কারণ আছে হয়ত৷ কারণ এদেশে ডিজিটাল নাগরিকরা এতটা অধিকার সচেতন যা উন্নত দেশেও দেখিনি৷ এখানে ভেপু সন্ত্রাসীর কানে ইন্ডিয়ার মতো ভেপু থেরাপি দিলে এ নিয়ে তারা অধিকার প্রশ্নে ঝাপিয়ে পড়বে৷ আমার দৃষ্টিকোণে ঢাকায় খেপু বাজানোর কোন প্রয়োজন নেই৷ একটা গাড়ির পেছনে আরেকটা গাড়ির অবস্থান৷ গাড়ির হর্নকে শহরের সবচেয়ে বড় বিপদ বলা যায়৷ নতুন অাপদ যুক্ত হয়েছে মটর সাইকেল৷ কানের কাছে এসে হর্ন দেয়৷ এটা কোন ক্রমেই মেনে নেয়া যায়না৷
এবার আমার অভিজ্ঞতাটা বলি৷ আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখাও৷ ঢাকায় ছয়মাস প্রাইভেট কার ড্রাইভ করেছি৷ একটা হর্নও দেইনি৷ কোন অসুবিধা হয়নি৷ কোন অ্যাক্সিডেন্টও করিনি৷ তবে কিছু অদ্ভূত ঘটনা মনে পড়ছে৷ মানুষ রাস্তায় দাড়িয়ে রয়েছে৷ আমার গাড়ি দেখেও সরে যাচ্ছেনা৷ তারা হর্ন শুনতে অভ্যস্থ৷ তারা গো ধরেছে হর্ন দেবো তারপর তারা সরবে৷ আমিও হর্ন দেবোনা৷ পরে গাড়ি থামিয়ে তাদের হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়েছি৷ তবুও হর্ন দেইনি৷ আমার ধারণা হর্ন শুনতে তারা অভ্যস্থ৷ তবে হর্ন বন্ধ হলে মানুষ গাড়ি দেখেই সরে যাবে৷ হর্নের অপেক্ষা করবেনা৷ যশোরে এডিএম থাকাকালে ড্রাইভারদের সমাবেশে যেতাম৷ তাদের বুঝিয়েছি৷ হর্ন বাজালে কী কী ক্ষতি হয়৷ বহুদিন পর একবার এক ড্রাইভারের সাথে দেখা৷ তিনি আমাকে বলেছেন, স্যার আপনার কথা মনে রেখেছি৷ ওই ট্রেনিংয়ের পর না পারলে আর হর্ন বাজাইনা৷ এতে কোন অ্যাক্সিডেন্টও হয়নি৷
যাই হোক এমুহূর্তে ভেপু সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে কয়েকটা পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে৷
এক. সব গাড়ি থেকে হর্ন খুলে ফেলা যেতে পরে৷ হর্ন না দেয়ার কারণে কোন অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে বলে আমার জানা নেই৷ হর্ন না থাকলে চালক গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রেখে চলাচল করবে৷ আরোহী ছাড়া অন্যরাও সতর্ক থাকবে৷
দুই. প্রত্যেক গাড়ির ভেপুর সাথে মিটার যুক্ত করে দেয়া যেতে পারে৷ প্রতিকার হর্ন দিলেই এক টাকা করে মিটারে উঠবে৷ লাইসেন্স নবায়নের সময় এই টাকা আদায় করা হবে৷ আমার ধারণা প্রতি হর্নে পাঁচ পয়সা কর যুক্ত করলেও লাখ কোটি টাকা আদায় হবে৷ আশংকাজনকভাবে দেশে কানের রোগি বাড়ছে৷ এ টাকা চিকিৎসা খাতে ব্যয় করা যেতে পারে৷
সবশেষে সবার প্রতি অনুরোধ৷ আসুন যারা হর্ন বাজায় তাদেরকে ভেপু সন্ত্রাসী হিসেবে গন্য করি৷ কোন সভ্য মানুষ ভেপু বাজায়না৷

লেখক:

কাজী সায়েমুজ্জামান
লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট
ঢাকা
২৩ জুন ২০২৩

সর্বশেষ