৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
কক্ষ পরিস্কার করতে বিলম্ব হওয়ায় মাদ্রাসা ছাত্রকে পিটিয়ে জখম ৪৪তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশঃ মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৮ মে বিয়ে বাড়িতে কাজীকে চর থাপ্পড় মারলেন বিএনপি নেতা ! তীব্র তাপদাহে বিশুদ্ধ পানি ও শরবত বিতরণ করলো আলীমাবাদ সমাজ কল্যাণ সংস্থা আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা চলছে : এসএম জাকির হোসেন উপজেলা নির্বাচন: ভোলার তিন উপজেলায় ৩৭ প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ ভান্ডারিয়ায় ককটেল ফাটিয়ে ও কুপিয়ে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই বরগুনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনেই আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রার্থীদের পাথরঘাটায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা, ৪ জনকে শোকজ কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে এল মৃত ডলফিন

এফসিপিএস প্রশিক্ষণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

বাণী ডেস্ক: গত আট মাস ভাতা পান না বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জন্স (বিসিপিএস) অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজ ও ইনস্টিটিউটগুলোতে অধ্যয়নরত এফসিসিপিএস প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা। ফলে ধার-দেনা করে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে তাদের। নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাস পরেও ভাতা না পেয়ে অনেকেই সাময়িকের জন্য কোর্স থেকে সরে পড়ছেন।
বিসিপিএস জানিয়েছে, অর্থ বিভাগ থেকে টাকা না আসায় ভাতা দিতে বিলম্ব হচ্ছে। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, ভাতা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করার নীতিমালাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি অর্থে বিবেচনাধীন আছে, অনুমোদন হলেই ভাতা হয়ে যাবে।

আট মাস ভাতা নেই
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) অধ্যয়নত একজন এফসিপিএস প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক বলেন, ‘ছয় মাস পর পর আমাদেরকে ভাতা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে আমরা কোনো ভাতা পাই না। ফলে একবার ভাতা পাওয়ার পর অপেক্ষায় থাকি, পরবর্তী ভাতা কখন আসবে। কিন্তু আট মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলো, এখনো ভাতা পাচ্ছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিসিপিএসের নিয়ম অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই মাসে ভাতা পাওয়ার পর চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে ভাতা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই মাস পরও আমরা ভাতা পাচ্ছি না।’
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি
ঢামেকের ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘দীর্ঘ পাঁচ বছরের এমবিবিএস এবং এক বছরের ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করার পর প্রায় এক বছর সীমাহীন পরিশ্রম করে গত সেশনে স্বপ্নের পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন এফসিপিএসে সুযোগ পাই। কোর্সে যুক্ত হওয়ার পর জানতে পারি, এখানে অধ্যয়নরত প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা প্রদান করা হয় ছয় মাস পর পর। ঋণ করে প্রস্তুতি নিয়ে কোর্সে সুযোগ পাই। এর পর আরও ছয় মাস সম্মানি ভাতা পাবো না ভেবে, সুবর্ণ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আর্থিক বিবেচনায় তখন প্রশিক্ষণ শুরু করতে পারিনি। আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে তখন বাইরে জিপি প্র্যাকটিস শুরু করি। এভাবে কিছু টাকা সঞ্চয় করে কোর্সে যুক্ত হই। এই সঞ্চিত টাকায় ছয় মাস পড়াশোনার পর ভাতা পেতে অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর আরও দুই মাস অতিবাহিত হলেও বিসিপিএস থেকে কোনো ভাতা পাইনি। অথচ ছয় মাস পর ভাতা দেওয়ার বিষয়ে বিসিপিএসের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। বিসিপিএস তাদের প্রতিশ্রুতি আট মাসে পূরণ করতে না পারায় আবার বাধ্য হলাম প্রশিক্ষণ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে। স্বপ্নের এফসিপিএস স্বপ্নই রয়ে গেলো।’
এই প্রশিক্ষণার্থী বলেন, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বারবার বলার পরও তারা প্রতিবারই ভাতা দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়ে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি তারা বলছেন, মন্ত্রণালয় থেকে নাকি এ পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ আসেনি।
দুর্মূল্যের বাজারে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে একজন চিকিৎসকের পক্ষে আর কত দিন জীবন নির্বাহ করা সম্ভব? এ পরিস্থিতিতে পরিবার, বৃদ্ধ বাবা-মার খোঁজ-খবর নেওয়া যেন আমাদের জন্য এক ধরনের বিলাসিতা।
প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘গত জুলাই মাসে ন্যায্য দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন হয়। দাবি ছিল, আমাদের ভাতা যেন প্রতি মাসেই দেওয়া হয় এবং বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সম্মানিটা যেন বাড়ানো হয়। সেখানে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকরা আমাদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে কর্মস্থলে ফিরে যেতে বলেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ফিরে যাই। কিন্তু আট মাস পার হলেও সেসব দাবি বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।’

ঋণের বোঝায় সরে পড়ছেন অনেকে
ঋণের জালে আটকে যাওয়ার কথা জানিয়ে রাজধানীর আরেক ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত এক প্রশিক্ষণার্থী বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য থেকে শুরু করে সামগ্রিক জীবন নির্বাহ খরচ বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের জুলাই মাসের ভাতা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। গত বছরের শেষ দিকেই বাসা ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ চালাতে গিয়ে ঋণ করেছি। ধারণা ছিল, জানুয়ারির শুরুতে ভাতা পেলে এ ঋণ শোধ করবো। কিন্তু জানুয়ারি গিয়ে আজ ফেব্রুয়ারিও শেষ হতে চললো, অথচ আমাদের ভাতা হাতে আসেনি। এই বয়সে যখন বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানের চাহিদা মেটানোর কথা ছিল, তখন মাসের পর মাস পকেটশূন্য। এই সীমাহীন অসহায়ত্বের কথা তো পরিবারের সদস্যদের কাছে বলা যাচ্ছে না। এই পরিস্তিতিতে উল্টো তাদের কাছে টাকা চাইবো কীভাবে? ঋণের টাকা পরিশোধের পাশাপাশি পরিবার-পরিজনের চাহিদা মেটানো অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় জীবন চালাতে গিয়ে কোর্সে সাময়িক ইতি টেনে চাকরি শুরু করতে হয়েছে।’

বিনা ভাতায় প্রশিক্ষণ-সেবা
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন জানিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক প্রশিক্ষণার্থী বলেন, ‘ভাতা না পেলেও কর্তব্যে কোনো রকম অবহেলা করছি না আমরা। এই দুর্মূল্যের বাজারে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন। কারও তো এই টাকায়ও চলে না। তাহলে একবার ভাবুন তো, প্রায় এক বছর ধরে ভাতা পাচ্ছি না, আমাদের জীবন কীভাবে চলছে!’
ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সামাজিক-পারিবারিক কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজনের বাসায় গেলে যাতায়াত ভাড়া, রোগী ও শিশুদের জন্য একটু ফলমূল নিতে হয়। কিন্তু তা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না বলে স্বজনদেরও ছেড়ে দিতে হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কোর্স চলাকালীন প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা যাবে না। তাহলে পেটে ক্ষুধা নিয়ে কীভাবে পড়াশোনা হবে? রোগী সেবা দেওয়া সম্ভব হবে? পুষ্টিবিধানের জন্য রোগীদেরকে সময়মতো খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিই আমরা, কিন্তু আমাদের খাবারের নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছেন না।’

বিসিপিএসের বক্তব্য
ভাতা বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তবে প্রতিবেদকের পরিচয় শেষে প্রসঙ্গটি তুলতেই বাইরে আছেন জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বিসিপিএসের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ডা. বিল্লাল আলম আজ মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বলেন, ‘অর্থ বিভাগ থেকে টাকা আসেনি। ফলে দিতে বিলম্ব হচ্ছে।’
কবে নাগাদ আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না হওয়ায় এই মুহূর্তে কোনো তথ্য দিতে পারবো না।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপসচিব (বাজেট শাখা) মো. আবদুল্লাহ হারুন আজ সন্ধ্যায় বলেন, ‘ভাতা ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হতো। ওটা বৃদ্ধি করে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। কিন্তু বর্ধিত ভাতা অর্থ বিভাগ থেকে এখনো অনুমোদন হয়নি। সে কারণে মনে হয় বন্ধ হয়ে আছে। অনুমোদন পেলে হয় তো ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার মতো বাজেট সংস্থান আছে। মূলত বর্ধিত ভাতার জন্য জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিএসএমএমইউ ২৫ হাজার টাকা করেছে। এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিসিপিএসও ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই অনুযায়ী, একটি নীতিমালাও তারা তৈরি করেছেন। আমাদের কাছে আসার পর আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের অনুমোদন নিয়ে অর্থে পাঠিয়েছি। কিন্তু অর্থ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।’
কবে নাগাদ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মিলতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত নভেম্বর থেকে পাঠানো হয়। মাঝখানে তারা নীতিমালাসহ বিভিন্ন বিষয় চাইলে এগুলোও সংযোজন করা হয়। বিষয়টি অর্থ বিভাগে বিবেচনাধীন আছে, অনুমোদন হলেই ভাতা হয়ে যাবে। যে কোনো সময় হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

সর্বশেষ