৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
তীব্র তাপদাহে বিশুদ্ধ পানি ও শরবত বিতরণ করলো আলীমাবাদ সমাজ কল্যাণ সংস্থা আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা চলছে : এসএম জাকির হোসেন উপজেলা নির্বাচন: ভোলার তিন উপজেলায় ৩৭ প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ ভান্ডারিয়ায় ককটেল ফাটিয়ে ও কুপিয়ে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই বরগুনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনেই আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রার্থীদের পাথরঘাটায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা, ৪ জনকে শোকজ কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে এল মৃত ডলফিন বাউফলে গর্ভে থাকা ভ্রূণ নষ্ট, স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে প্রেমিকের বাড়িতে তরুণীর অনশন ভোলায় পুলিশে চাকুরী দেওয়ার নামে প্রতারণা : প্রতারক আটক উপজেলা নির্বাচন : গৌরনদীতে তিন প্রার্থীর ব্যতিক্রর্মী প্রচারণা

জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা ও মুহম্মদ আলতাফ হোসেন

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

সাংবাদিকদেরকে সমাজের বিবেক ও দর্পন বলা হয়। একটি দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে সাংবাদিকদের। একজন সাংবাদিক তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় অপমান অপদস্থ নাজেহাল আহত ও নিহত হয়েছে। বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের প্রতি অবহেলা ও নির্যাতন, মিথ্যা মামলা দিয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংগঠন ও ব্যাক্তি অথচ ব্যাক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে থেকেই সাংবাদিক সমাজ নিরলস ভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে কখনও দ্বিধাবোধ করেননি। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় সমাজ ও রাষ্ট্রে সাংবাদিকদের পদ ও মর্যাদার সাথে আর্থিক কোন মিল নেই। কেহ কেহ পরিবার নিয়ে সামান্যতম বিলাসি জীবন যাপন থাক দূরের কথা তা চিন্তাও করতে পারছেন না। আজ অধিকার বঞ্চিত সাংবাদিকদের ঐক্যের মাধ্যমে সমাজে সুদৃঢ় ইস্পাত কঠিন ভূমিকা রাখতে হবে। স্বাধীনতা যুদ্ধেও আমাদের সাংবাদিক সমাজের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। সাংবাদিক সমাজ দূর্নীতিবাজ মুনাফাকারী মজুদদারী, অবৈধ সম্পদ অর্জন কারী, রাষ্ট্রের সম্পদ আত্মসাতকারী ও জুলুমবাজদের কাছে তো প্রতিপক্ষ মনে হবেই। কিছু অপরিপক্ক তথাকথিত রাজনীতিবিদ ও সমাজ সেবকদের সিন্ধান্তে বিভিন্ন সরকারের সময় কিছুটা হলেও বাধা গ্রস্ত ও আটকে ছিল এবং আছে সাংবাদিকদের অধিকার এবং স্বাধীনতা। সমাজে কিছু অবাঞ্চিত ব্যক্তি ভালো লেভাস লাগিয়ে সাংবাদিকদের সাংঘাতিক বলে থাকেন। আমি তাদের কে ধিক্কার জানাবার পাশাপাশি এটাও বলতে ইচ্ছে করে সাংবাদিকগন সাংঘাতিক না হলে সমাজে সব ধরনের অপরাধের সিন্ডিকেটের সংবাদ কি ভাবে তুলে ধরবে। সকালে উঠে রেডিও টিভি সংবাদপত্র সহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে যে সংবাদটি আপনি পান তা তাদের কষ্টের ফসল। সাংবাদিকদের ভাষাই হলো বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশ ও সত্য উদঘাটন করা।

সাংবাদিকদের হাতে থাকে না কোনো অস্ত্র। বহুলাংশে কোনো প্রতিষ্ঠান সংগঠন বা ব্যাক্তির দুনীর্তি বা অন্যায়ের খবরটি উন্মেচন বা সংগ্রহ করতে যান তখন তাদের হাতে থাকে একটি কাগজ ও কলম বা একটি ক্যামেরা আর মনোবল এটাই তাদের হাতিয়ার। জঙ্গি স্টাইলে সাংবাদিকদের উপর বিভিন্ন সময় হামলা হয়েছে। ক্যামেরা ভাংচুর ও মার দিয়েছে এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও অনেক সময় ব্যর্থ হয়েছে। তারপরও নিরস্ত্র সাংবাদিকদের সারা বিশ্বে প্রতিবাদ থেমে থাকেনি আর থাকবেও না। মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডাবলু বুশ ইরান ইরাক যুদ্ধ বাধিয়ে ৪২ টি দেশকে জড়িত করেছিল এবং ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে অপমান জনকভাবে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পর ইরাকে গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়েছে। যুদ্ধের পরবর্তী সময় জর্জ বুশ সাধু সেজে ইরাকে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। প্রতিবাদের অন্য কোন ভাষা না পেয়ে তাকে মুনতাসির আল ড্যাইদী নামের এক সাংবাদিক জুতা নিক্ষেপ করেন। যদিও কেহ কেহ এই সাংবাদিকের পক্ষে ও বিপক্ষে বলেছেন।
যা হউক সাংবাদিক সমাজকে আজ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

সব ধরনের বিভেদ, অভিযোগ, অভিমান কে টিভি সাংবাদিক, কে বড় পত্রিকার, কে ছোট পত্রিকার সাংবাদিক এই হিসাব না মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

প্রিয় সাথীরা,
সাংবাদিক ঐক্যের কিছু ইতি কথা আলোচনা করা যাক। ১৮ই ফেব্রুয়ারী হচ্ছে বাংলাদেশে সাংবাদিক সমাজের অধিকার আদায়ের প্রাতিষ্ঠানিক আন্দোলনের সূচনা দিবস। ১৯৫১ সালের এই দিনে ঢাকায় তদানীন্তন পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও দৈনিক সংবাদ সম্পাদক মরহুম খায়রুল কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন (ইপিইউজে) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ইউনিয়ন তৎপরতা শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাত্র ৫১ দিন পর ১৯৭২ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী দৈনিক বাংলার সহকারী সম্পাদক বাবু নির্মল সেনকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয় বাংলাদেশ সাংবাদিক ফেডারেশন। এর প্রায় দেড় বছর পর ১৯৭৩ সালের ৩০শে জুন ও পহেলা জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সমাবেশে বাংলাদেশ সাংবাদিক ফেডারেশনের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বা বিএফইউজে রাখা হয়। বাবু নির্মল সেন বিএফইউজের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন। ইতি পূর্বে ১৯৬১ সালের ৯ই মে গঠিত হয় মফস্বল বা গ্রামীণ সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি। সংবাদপত্র কেন্দ্রে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য জাতীয় ভিত্তিক বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং মফস্বল সাংবাদিকদের জন্য বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি থাকলেও দেশের সর্বস্তরের সাংবাদিকদের জন্য একক কোন সংগঠন তখন ছিল না। তাছাড়া এ দু’টি সংগঠনে দেশের সাপ্তাহিক ও সাময়িক পত্র-পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মী ও সাংবাদিকদের কোন প্রবেশাধিকারও ছিল না।

ইতিমধ্যে সংবাদপত্রের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করল। সাংবাদিক বাড়ল প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাংবাদিকগণ ঢাকা বা অন্য শহরের সাংবাদিকদের কাছে মূল্যায়ন পাচ্ছিল না বিষয়টি মুহাম্মদ আলতাফ হোসেনের মেধা সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা, সাহস ও বিবেককে স্পর্শ করল। তাই তিনি নিরবে সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেললেন দেশে সর্বস্থরের সাংবাদিকদের জন্য একটি কল্যানমুখী সাংবাদিক সংগঠন করা দরকার। সাপ্তাহিক নবজাগরন অফিসে তিনি একটি সভাও ডাকলেন। আমরা তখন মুহাম্মদ আলতাফ হোসেনের সেই সভায় যোগ দিয়েছি কিছু মধ্যবয়সী ও তরুন সাংবাদিক। তারিখটা ছিল ১৯৮২ সালের ১২ ইং ফেব্রুয়ারি। সভায় অনেক আলাপ আলোচনান্তে সিদ্ধান্ত হলো এবং গঠন হলো ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি। সংগঠনের নাম নির্ধারণ করা হলো জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা। প্রেস রিলিজ গেল, প্রকাশ হলো পরদিন বিভিন্ন পত্রিকায়। হতবাক ঢাকার সাংবাদিক নেতারা। তখন মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন দৈনিক আজাদে সহকারী বার্তা সম্পাদক। ঢাকার কিছু সাংবাদিক নেতারা প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে নব গঠিত সাংবাদিক সংস্থার সমালোচনা ও বিরোধিতা করতে দ্বিধা করলো না। এতে থেমে রইলেন না মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন। মনে হল ঢাকার সাংবাদিকদের সমালোচনা তাকে আরো সাহস ও উৎসাহ যুগিয়েছে। সংস্থার কার্যক্রম এগিয়ে যেতে থাকল। কিন্তু হঠাৎ ১৯৮২ সালে ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনা প্রধান এইচ. এম. এরশাদ সামরিক শাসন দিলেন। সাংবাদিক সংস্থা সহ সব সাংগঠনের উপর নিষেধাজ্ঞা ও কড়া নজরদারি। কিন্তু কোন কিছুতেই আটকাতে ও থামাতে পারলেন না মুহাম্মদ আলতাফ হোসেনকে। তিনি সংস্থার পরিধি বৃদ্ধির জন্য সারাদেশের সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ করতে থাকলেন। সাংবাদিক সংস্থা যেন তাকে প্রতিষ্ঠিত করতেই হবে। সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য এই সংগঠন কথা বলবে।
সরকারী রেজিষ্ট্রশন ভুক্ত এই জাতীয় সাংবাদিক সংস্থায় সব ধরনের সাংবাদিকগণ যোগ্যতার ভিত্তিতে সদস্য ও নেতা হতে পারবে এই সংস্থার। সাংগঠনটি সদস্য অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষ। তাই আজ সারাদেশে ও বিদেশে রয়েছে এর কয়েক হাজার সদস্য। দেশের সাংবাদিক সমাজতো বটেই প্রশাসন সহ দেশের সচেতন নাগরিকের কাছে এই সাংবাদিক সংস্থার পরিচিতি রয়েছে ব্যাপক। আমি একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে আমার ও ভালো লাগছে যে মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন নিজেই দেখতে পাচ্ছেন যে তার নিজের হাতে লাগানো জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা নামের সেই গাছটিতে অনেক ফল ধরেছে। আমাদের মাত্র এগারো জন সাংবাদিক কে নিয়ে যে শুরুটা তিনি করেছিলেন তা আজ এগারো দিয়ে অনেক এগারো পূরন দিলে যা হয় তাই হয়েছে। সংস্থার সদস্য নেই দেশে এমন কোন বিভাগ, জেলা ও উপজেলা নেই। জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা আজ দেশের বৃহৎ সাংবাদিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এর পরিচিতি অনেকটা সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জান্তিক পর্যায়ে চলে গেছে। আপনাদের সহযোগিতা ও সাংগঠনিক তৎপরতায় শক্তিশালী হয়েছে এই সংস্থা ও মুহাম্মদ আলতাফ হোসেনের হাত ধরে অনেকেই জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার- নেতা কর্মী হয়ে সমাজে সম্মান ও মর্যাদা পেয়েছেন ও পাচ্ছেন।

প্রিয় সাথীরা,
সংস্থার সভাপতি মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন গত ৪২ বছর যাবৎ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে সাংবাদিকদের ঐকবদ্ধ করতে চেয়েছেন এবং করেছেন। এটা ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার আমার সবার। এই সংগঠনকে যিনি সন্তান মনে করেন ও আন্তরিকতার সহিত ভালোবাসেন তার স্বীকৃতি শুধু তাকে ধন্যবাদ দিলে হবেনা। তার আদর্শ হৃদয়ে ধারন ও লালন করতে হবে। তিনি অনেককে এই সংস্থার আজীবন সদস্য করেছেন। আমরা আজীবনের জন্য তাকে কি দিলাম। প্রশ্ন আপনাদের কাছে? অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতাকে ঐ প্রতিষ্ঠান সম্মানি দিয়ে যাচ্ছেন। এই সংস্থা আলতাফ হোসেন যে শ্রম ও মেধা ব্যয় করেছেন ও করছেন তাকে যদি সংস্থা সম্মানী বা বেতন দিত তাহলে এই বিশাল সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলতাফ হোসেনের বেতন কত হতে পারতো? তিনি সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সারা জীবন আপনাদের পাশে থেকেছেন। আমরা দোয়া করি তিনি দীর্ঘজীবি হোন।

তার হাতে গড়া সাংবাদিকদের দাবী আদায়ের এই সংগঠনটি সারা জীবন সাংবাদিকদের পাশে থাকুক। মুহাম্মদ আলতাফ হোসেনকে বর্তমানে বার্ধিক্য আপন করে নিলেও আজও সাংবাদিক সংস্থার কাজ কর্মে তিনি এখন ও তরুণ। তিনি বহু সংগঠনের জন্ম দিয়েছেন। কোন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে প্রতিষ্ঠিত করা খুবই কঠিন এবং দুরূহ। কিন্তু একটি নিয়ম তান্ত্রিক শৃঙ্খলার মাধ্যমে তিনি সাংবাদিক সংস্থা। প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই তাকে আজ থেকে এই সংগঠনের কেন্দ্র ও বিভিন্ন ইউনিটের নেত্রীবৃন্দ অবশ্যই মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন কে এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বলবেনও লিখবেন সাংবাদিক সংস্থা তাকে আজীবন প্রতিষ্ঠাতার মর্যাদা দিতে বদ্ধপরিকর ও প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। আমরা তার নেক হায়াত ও সুস্থতা কামনা করি।
মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হউন।
“খোদা হাফেজ”

লেখক-
মোঃ শাহজাহান মোল্লা
নির্বাহী সভাপতি
জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা

সর্বশেষ