আমি সংবেদনশীল মানুষ। অনেক সময় আমি নিজেই আমাকে পাঠ করতে পারি না। আমার কাছের মানুষেরাও অনেক সময় এই কথা বলে থাকে। আমি শুনি। নিরবতা পালন করি। কখনো কখনো স্মিত হাসি। আমি প্রায়ই ঘোরে বসবাস করি। আজকালকার জীবনে, বেশ কিছুদিন ধরে যেমন আমার চেতনে উত্তম-সুচিত্রা ঢুকে পড়েছে। এঁদের নিয়েই কখনো কখনো সময় কাটাই। তাছাড়া ভালো মন্দ মিলিয়ে আমি মানুষ হলেও স্রষ্টার সুন্দর সৃষ্টি ও রহস্যময়তাও আমাকে টানে। এসব নিয়ে থাকি। কখনো কখনো বাস্তব জীবনের হল্লা এবং আমার একাকীত্বের গহন ও আড়ালের নান্দনিকবোধ ও সৌন্দর্যও আমাকে টানে। তখন আমি নার্সিজমের দ্বারস্থ হই। নিজের প্রেমে নিজেই পড়ি। কখনো কখনো এই প্রেম কালও হয়।
এসবের বাইরে বাস্তব চরিত্রের হিউমার এবং উইট আমাকে আন্দোলিত করে। কখনো সখনো। আজকে এমন একটি গল্প শুনলাম মাগোত্রীয় একজন থেকে। তিনি আমাকে পুত্রজ্ঞানে বিশেষ স্নেহের চোখে দেখেন। কেন জানি এমনটি হলে মারজোরি কিনান রওলিংস -এর ‘অ্যা মাদার ইন ম্যানভিল’ এর সেই মায়ের কথা মনে পড়ে। আর নিজেকে মনে হয় ‘জেরি’। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার কালে আমার একান্ত কাছের বন্ধুরা কী মনে করে যেন আমাকে ‘জেরি’ বলে ডাকতো।
যা হোক, প্রসঙ্গে ফিরি।
মা দিবস উপলক্ষ্যে উল্লেখিত মানুষটি একটি পোস্ট দিয়েছেন মা’কে নিয়ে। পোস্ট দিয়েই মা’কে ফোন করেছেন। ফোন দিয়ে বল্লেন-‘মা, তোমাকে নিয়ে তো আমি অনেক প্রশংসার কথা লিখেছি আজ ফেইসবুকে।‘
মা- তো আমি কী করতাম!
কন্যা- কী করবা মানে? তুমি যে ভালো মা, আমি যে তোমার গুণগান করলাম, মানুষ তো জানলো তোমার তুলনা হয় না। তাহলে আমি বিশেষ কিছু পাবো না?
মা- আমি কী খারাপ? আমি ভালা মা বলেই তো তুই লেখছস। তা আমি তরে কী দিমু?
কন্যা- এই ঈদে বোনাস একটু বাড়ায়ে দিয়ো। টাকার অংক বাড়াইয়ো। প্রয়োজনে পোস্টের সঙ্গে তোমার আর আব্বার একটা সুন্দর ছবিও দিয়া দিমু!
মা- অস্তাগফিরুল্লাহ! আমার ছবি দিয়ুন লাগতো না। এই বয়সে আমারে বেপর্দা বানাইস না। হজ করছি। আল্লাহরে বিরক্ত করিস না।
কন্যা- আইচ্ছা যাও, ছবি দিতাম না। টাকাটা বাড়িয়ে দিয়ো।
মা- নারে মা, পারতাম না। এই লেহা(লেখা) তুই মুইচ্ছা ফালা। ল্যাখ(লেখ) মা কৃপণ, টাকা দেয় না!
কন্যা- দেখো মা, যদি টাকা বাড়ায়ে না দাও। তোমাদের বিপদ আছে। ফেইসবুক তো তোমাদেরকে চিনে ফেলেছে। টাকা বাড়ায়ে না দিলে তোমার কাছ থেকে আব্বারে ছিনিয়ে নিয়ে সুন্দরী মহীলার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিবো। আমি হাজার কইলেও ফিরায়ে দিতো না। এখন চিন্তা করে দেখো টাকা বাড়ায়ে দিবা কী না!
মা- এইত্যা কী কস তুই? হায়রে, তীরে আইয়্যা নাও ডুববো? মাইনসে কী কইবো? মাইনসে কইবো আমি আমার সোয়ামির খেদমত করি না বলে এই দশা!
কন্যা- এতো কথা শুনতে চাই না, দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাও। নয়তো আব্বা গেলো বলে!
মা- মা গো, ফেইজবুগের বেডারে ক এই কাম না করতো। এইবার করোনার কারণে ভাড়া বেশি পাই নাই। যা, তারপরেও তরে একটু বাড়ায়ে দিমু নে। তর অইন্য ভাই বোনেরে কইস না। আর মা না বালা, তুই ফেজবুগের বেডারে বোঝাইয়্যা ক আমার সোয়ামীরে নিয়া যাতে ছিনিমিনি না খেলে!
কন্যা- ট্যাহা বাড়াইয়া দিলে কমু।
মা- দিমু, কইছি ত!
কন্যা- যাও, আমি কইয়্যা দিতাছি, তুমি টাকা রেডি কর।
মা- আইচ্ছ্যা মা, রেডি করতাছি। তর পোলারেও সাবধানে রাখিস। আমিও তারে লইয়্যা উল্ডা পাল্ডা লেহাইয়্যাম (লেখাবো) ফেজবুকের বেডারে দিয়া! তুইও কিছু ট্যাহা রেডি রাহিস!
লেখক: কবি, লেখক ও সাংবাদিক