৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
কক্ষ পরিস্কার করতে বিলম্ব হওয়ায় মাদ্রাসা ছাত্রকে পিটিয়ে জখম ৪৪তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশঃ মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৮ মে বিয়ে বাড়িতে কাজীকে চর থাপ্পড় মারলেন বিএনপি নেতা ! তীব্র তাপদাহে বিশুদ্ধ পানি ও শরবত বিতরণ করলো আলীমাবাদ সমাজ কল্যাণ সংস্থা আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা চলছে : এসএম জাকির হোসেন উপজেলা নির্বাচন: ভোলার তিন উপজেলায় ৩৭ প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ ভান্ডারিয়ায় ককটেল ফাটিয়ে ও কুপিয়ে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই বরগুনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনেই আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রার্থীদের পাথরঘাটায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা, ৪ জনকে শোকজ কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে এল মৃত ডলফিন

‘দাঁতের পোকা ফালাই। শিঙ্গা লাগাই। যাদু দেখাই। সাপ খেলা দেখাই।

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
‘দাঁতের পোকাফালাই। কোমরব্যথা, বাত ব্যথায় শিঙ্গা লাগাই। যাদু দেখাই। সাপ খেলা দেখাই। খা-খা-খাবখখিলারেখা, কাঁচাধইরাখা।’ – প্রচলিত এ কথাগুলোনদীতেভাসমানযাযাবর বেদে সম্প্রদায়েরনারীদের। সুর ও ছন্দ মিশ্রিত এ কথাগুলোইজানানদিচ্ছে বেদেদের উপস্থিতি। শীতের মৌসুমে ক্ষেতেরধানপাকাশুরুহলেইজীবিকারউদ্দেশ্যে দক্ষিণাঞ্চলেরভাটির দেশেরবিভিন্নএলাকারনদীতীরেবিচিত্ররঙ ও বাহারিঢঙের ছোট ছোট নৌকারবহরনিয়ে নোঙর ফেলে বেদে সম্প্রদায়। ওদেরঅনেককেইআবারসড়ক পথে এসেনদীতীরেবাঁশের চেরা ও পলিথিনের সাহায্যে অস্থায়ী ছোট ছোট ডেরা বেঁধেখুপরিঘরেঘাঁটি গেড়ে থাকতে দেখাযায়। রাতের বেলাকারোঘরে সোলারবাতিআবারকারোঘরেচার্জারলাইটব্যবহারকরতে দেখাযায়। এ সময় কৃষকেরঘরেঘরে গোলাভরাচাল ও হাতে থাকেটাকা। তাই এ সময়ে এ অঞ্চলে বেদেদের ব্যবসাহয়ে ওঠে জমজমাট। এ কারণেইশীতকালেওরাআসেভাটির দেশে। দক্ষিণাঞ্চলেরমানুষ বেদেদেরকেবাইদ্যা বাবাইদানীবলেডাকে। কেউ কেউ আবার ওদেরকেবাদিয়াকিংবাজলেরজিপসিবলেওডাকে। হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখনিয়েইশতশতবছরধরেজীবনের সাথে সংগ্রামকরেওরাআজওটিকেআছে। আধুনিকসমাজ ও সভ্যতারধারধারেনাওরা। নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখে বেদে সমাজেরপ্রচলিতব্যবসাকেইওরাআঁকড়েধরে বেঁচেআছে। শতকষ্টেরমাঝেও এতেই যেনওরাসমস্তসুখখুঁজেপায়। বেদে সমাজেরনারীরাইসংসারেরমূল চালিকাশক্তি। নারীরা দূর-দূরান্তেরগ্রাম-গঞ্জে গিয়েপরিশ্রমকরে অর্থ উপার্জনকরতেঅভ্যস্ত। নারীরা রোগেরজন্য মানুষেরকাছেতাবিজ, কবজ, ওষুধ, কড়িবিক্রি করেএবংমানুষকেযাদু ও সাপ খেলা দেখিয়ে অর্থ উপার্জনকরে। আরপুরুষরাপাখিশিকারকরেএবংসাপ ও মাছধরে অর্থ উপার্জনকরে। এ ভাবেই বেদেরাজীবিকানির্বাহকরে থাকে। কুসংস্কার ও উদাসীনতারকারনে বেদেরাশিক্ষারআলো ও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত থাকায়শতাব্দীর পর শতাব্দীপ্রজন্মের পর প্রজন্ম অন্ধকারেইপড়ে থাকে। ফলেসচেতনতারঅভাবে বেশিরভাগসময়েইওরা স্বাস্থ্যহীণতায় ভোগে। এমনকিঅনেকসময়ওদের কেউ কেউ কঠিন রোগেআক্রান্তহয়েঅকালেমৃত্যুবরণওকরে। শিক্ষারআলোনা থাকায়বাইরের জগত থেকে ওরাআলাদা। বহির্বিশ্ব সম্পর্কে জানারআগ্রহওওদের নেই। ওরা দু’ বেলা দু’মুঠো খেয়েপরে বেঁচে থাকারসংগ্রামকরছে। বেদেরাশীতের মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের একেক এলাকায় ১ মাসকরে ৫-৬ মাস থাকে। বর্ষা মৌসুমেওদেরব্যবসায়ভাটাপড়ে। সে কারণেজীবিকারউদ্দেশ্যে ওরাআবারচলেযায়উত্তর বঙ্গে। বছরেরপ্রায়পুরোটাসময়ইওরানদীতে নৌকায় ভেসেকাটায়। জলে ভেসেচলা নৌকাইওদের ঘর-বাড়ি। ওদেরজন্ম-মৃত্যু-বিয়ে এ তিনইহয় নৌকায়। নদী ও নৌকা এ দুটিইওদেরজীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়েআছে। জলেবাসকরেপ্রকৃতির সাথে সংগ্রামকরেওরাটিকে থাকেপ্রতিনিয়ত। এ ভাবেইচলেওদেরজীবনযাপন। পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌরসভার ফেরিঘাটএলাকাররামনাবাদ নদীতীরে থাকা বেদে সম্প্রদায়ের ডেরারকাছেগিয়ে দেখা ও খোঁজনিয়েজানা গেছে, নদীতীরেরবিভিন্ন স্থানে ২০-২৫ টি ডেরাআছে। প্রতিটি ডেরায় ৪-৫ জন লোক থাকে। নদীতীরের সৌন্দর্যকে যেনআরওবর্ধিতকরেছে বেদে সম্প্রদায়েরসারিবদ্ধ এই ছোট ছোট ডেরা। সকালেনারীরা ডেরা থেকে প্রয়োজনীয়সরঞ্জামাদি বাউপকরণপুরনোকাপড়েগাট্টি বেঁধেমাথায়নিয়ে দল বেঁধেছুটেচলেছেগ্রামেরদিকে। কিছু দূর গিয়ে ২-৩ জনকরেবিভিন্ন দলে ভাগহয়েশহর থেকে গ্রামেরপ্রত্যন্তঅঞ্চলেগিয়েওরাপৌঁছায়। সেখানেওরাবাড়িরসামনের পথে হেঁটে হেঁটেমনমাতানো সেই ছন্দময়কথাগুলোসুরেসুরেবারবারবলে। এতে আকৃষ্ট হয়েবাড়িরনানাবয়সেরনারী-পুুরুষ ও ছেলে-মেয়েরাবিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি ও বিনোদনপাবারআশায় বাইদানীদেরকে ডেকে বাড়িনিয়েযায়। বাড়িতেগিয়েওরাদাঁত ও বাতব্যাথাসহবিভিন্ন রোগীদেরকেতাবিজ, কবজ, ওষুধ, কড়ি দেয় এবংকখনোকখনোযাদু ও সাপ খেলা দেখায়। বিনিময়েচালঅথবাটাকানিয়েমনেরআনন্দে ওরাআবারসন্ধ্যারআগেই ডেরায়ফিরেআসে। এদিকে খুব ভোরেপুরুষরাপাখিশিকারেরউদ্দেশ্যে ডেরা থেকে বেড়িয়েপড়ে। ওদেরপ্রত্যেকের সঙ্গে আছে স্টীলেরবাটকিংবাগাছেরডাল ও রাবারেরসাহায্যে তৈরিএকটিছটকাএবংপর্যাপ্তমারবেল গুলি। মূলত এই ছটকা ও মারবেল গুলি দিয়েইওরাপাখিশিকারকরে থাকে। নিখুঁতনিশানারকারনেইওরাপাখিশিকারেপটু। পাখিশিকারের উপযুক্ত স্থানহলোগ্রামেরবন-বাদাড়। তাইপাখিশিকারে যে যারমতোকরে সেই স্থানগুলোরদিকেইছুটছে। সন্ধ্যারআগেইওরাপ্রত্যেকেই কম-বেশিপাখিশিকারকরে ডেরায়ফিরেআসে। ওরানিজেদের প্রয়োজনমিটিয়েঅবশিষ্টপাখিবাজারেবিক্রি করে। তবেসকারেরনিষেধাজ্ঞারকারণেওরাএখনলুকিয়েপাখিশিকারকরে। সাহসীপুরুষরা জঙ্গলে গিয়েজীবনেরঝুঁকিনিয়েবড়বড়বিষধরসাপধরে ডেরায়নিয়েআসে। সাপগুলোরবিষদাঁত ভেঙ্গে দিয়েকিছুসাপতাদের বশেএনেনিজেদের ব্যবসারকাজে রেখেবাকীসাপবাজারেচড়া দামেবিক্রি করে দেয়। সাপধরেবিক্রি করাওওরাকমিয়ে দিয়েছেসরকারের এ নিষেধাজ্ঞারকারণে। পুরুষদের কেউ কেউ ডেরারকাছেবড়শিদিয়েনদীতেমাছধরে। ওরানিজেদের চাহিদামিটিয়েবাকিমাছবাজারেবিক্রি করে। পাশাপাশিরান্নারকাজওকরে থাকেওরা। এছাড়া ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের দেখাশোনার দায়িত্বওওদের। আবারসময়করেওরানিজেদের ছেলে-মেয়েদেরকেওদের পেশাগত বিদ্যায়পারদর্শী করে তোলে। যাযাবরজীবনযাপন ও খেটে খেতে অভ্যস্ত বেদে সম্প্রদায়েরনারী-পুরুষরা।একতাবদ্ধ হয়ে থাকাওদেরজীবনেরএকটা বৈশিষ্ট্য। বেদে সমাজেসরদারের আদেশ-নিষেধপালনকরাই যেনওদেরধর্ম। সরদারেরঅনুমতিক্রমে ছেলে-মেয়েদের বিয়েশাদি ওদেরনিজেদের মধ্যেইহয়ে থকে। ওরাবাইরেরমানুষদের সাথে কম মিশে। বেশিরভাগসময়েইওরানিজেদের কাজে ব্যস্ত থাকে। বেদেরা খুব সাহসী। একদিকে ওরা খুব আবেগপ্রবণ। আবারকখনোকখনোওরাহিং¯্র রূপওধারনকরে। বাইরেরনানাবয়সেরমানুষেরকাছেওরা কৌতুহলপ্রিয়হয়ে থাকে। জনশ্রুতিআছে, বেদেরাভারতেরপশ্চিম বাংলা প্রদেশের দক্ষিণ-চব্বিশপরগনা জেলারবদরপুরএলাকা ও আসামরাজ্যেরকামরূপ জেলারকামাক্ষ্যাএলাকারআদিবাসী। ওদেরঅধিকাংশইমুসলমান ও অল্পসংখ্যকসনাতনধর্মাবলম্বী। ওদেরনিজস্ব ভাষাআছে। তবেহাজারবছরধরে এ দেশে বসবাসকরায়ওরা বাংলা ভাষাআয়ত্তকরেনিয়েছে। বেদে সরদারইমামুল হোসেনসাংবাদিকসঞ্জিব দাসকেবলেন, ‘আমাদের সমাজের সব পুরুষ লোক ও মেয়ে লোকপরিশ্রমকরেআয়করতেপারে। আমরা জঙ্গল থেকে বড়বড়সাপধরি। সাপধরতে কৌশললাগে, আবারবুকেসাহসওলাগে। সাপধরতেগিয়েআমাদের অনেকেসাপেরকামড়েমারাও গেছে। আমরাসাপ খেলা দেখিয়েমানুষকেআনন্দ দেই। নৌকার চেয়েএখানেগাড়িতেআসাসহজ।তাই নৌকাএলাকায় রেখেএসেছি। নৌকায়আমাদের জন্ম। আবার এই নৌকাতেইআমাদেরমিত্যু। জীবনেরজন্যে নদীরজলে নৌকায় ভেসে এ ঘাট থেকে ও ঘাটেযাই। এইতোআমাদের জীবন।’

সর্বশেষ