সেলিম শিকদার, সিরাজগঞ্জঃ-
সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে শুরু হয়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন। এতে প্রায় ৭০ মিটার বাধ ও শতাধিক বাড়ীঘর মুহুর্তের মধ্যে নদী গর্ভে বিলিন হয়েগেছে।
অতিমাত্রায় ভাঙ্গনের ফলে হুমকীর মুখে পড়েছে আশে পাশের কয়েকটি গ্রামের সহস্রাধিক বাড়ি-ঘর।
গত শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সিমলা ও পাঁচঠাকুরি এলাকার প্রায় ৭০ মিটার স্থান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি ও উদাসিনতার কারনেই স্পার সহ নদীতীরবর্তী এলাকয় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এসময় তারা আরোও জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা গনের সঠিক রক্ষানা-বেক্ষনের অভাবে সিমলা-পাঁচঠাকুরী স্পারে ১ জুন ধ্বসে প্রায় ৭০ মিটার এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বালি ভর্তী জিওব্যাগ ফেলে কোন রকম দায়সারা ভাবে বাঁধটি সংস্কার করা হলেও মাত্র ক’দিনের মাথায় স্পারের স্যাংক এড়িয়াসহ অধিকাংশ এলাকা নদীগর্ভে বিলিন হয়েগেছে।
তখন থেকেই ক্রমাগতভাবে
এই এলাকায় নদী গর্ভে বিলীন হতে থাকে এলাকার বাড়ি ঘর,মসজিদ সহ বিভিন্ন স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকেই শুরু হয় যমুনায় নদীতীরবর্তী স্থানে ভয়াবহ ভাঙ্গন। শনিবার দুপুর পর্যন্ত শতাধিক বাড়ি-ঘর, মসজিদ,ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
অতিমাত্রা ঘূর্ণাবর্তে ভাঙ্গনের ফলে বাড়িঘরে থাকা আসবাবপত্র পর্যন্ত অনেকে উদ্ধার করতে পাড়েননি, পানিতে তলিয়ে গেছে।
এ সময় ভাঙ্গন কবলিত অসহায় মানুষদের আহাজারি ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না। ঘড়বাড়ি ফেলে কোনভাবে জীবন নিয়ে পালিয়ে এসেছেন অনেকে। অনেকেই ভাঙ্গন আতংকে ঘড়বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। যমুনায় ভয়াল ভাঙ্গনে সহায় সম্বল ভিটেমাটি সহ মাথাগোজার আশ্রয়টুকু হারিয়ে অসহায় মানুষগুলোর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের খোলা আকাশেরে নিচে আশ্রয় গ্রহন করছে।
ভাঙ্গন কবলিত স্থানীয় বাসিন্দা রমজান আলী অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারনে অত্র এলাকা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সময়মত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করলে এমন ক্ষতিকর পরিবেশ শৃস্টি হতোনা।
ছোনগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল আলম জানান, সিমলা স্পার এলাকায় ব্যাপক নদীভাঙ্গন শুরুহওয়ার ফলে গত দুদিনে শতাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, সিমলা স্পার বাঁধটি নদীতে বিলীন হওয়ায় যমুনার ফলে নদীর শ্রোত এবং গতি পরিবর্তন হয়ে সরাসরি বাঁধে আঘাত করছে।
আর একারণে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে দ্রুত বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধ কাজ শুরু করা হবে।
সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ জানান, ভাঙ্গন কবলিত ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদেরকে আপাতত নিরাপদ স্থানে রাখা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ লোকেদের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
পাঁচঠাকুরি সিমলা স্পার এলাকা ও বাঁধে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনের সংবাদপেয়ে শনিবার রাত ৩টার সময় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার (অপু) ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শনে আসেন।
এসময় সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পওর) কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে যমুনায় ভয়াল ভাঙ্গন রোধের কাজ পরিদর্শন ও তদারকি এবং দ্রুত ভাঙ্গন প্রতিরোধে জরুরী প্রয়োজনিয় ব্যাবস্থা গ্রহন করার নির্দেশনা প্রদান করেন।
এবং শনিবার সকালে সিমলা এলাকায় ভাঙ্গন কবলিত ও পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।
এসময় সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকার অসীম কুমার,স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল আলম, ইউপি সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দগন উপস্থিত ছিলেন ।