৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
৪৪তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশঃ মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৮ মে বিয়ে বাড়িতে কাজীকে চর থাপ্পড় মারলেন বিএনপি নেতা ! তীব্র তাপদাহে বিশুদ্ধ পানি ও শরবত বিতরণ করলো আলীমাবাদ সমাজ কল্যাণ সংস্থা আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা চলছে : এসএম জাকির হোসেন উপজেলা নির্বাচন: ভোলার তিন উপজেলায় ৩৭ প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ ভান্ডারিয়ায় ককটেল ফাটিয়ে ও কুপিয়ে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই বরগুনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনেই আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রার্থীদের পাথরঘাটায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা, ৪ জনকে শোকজ কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে এল মৃত ডলফিন বাউফলে গর্ভে থাকা ভ্রূণ নষ্ট, স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে প্রেমিকের বাড়িতে তরুণীর অনশন

৪০ বছর ধরে বৈঠা হাতে বরিশালের মরিয়ম

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

অনলাইন ডেস্ক ::: বরিশালের কীর্তনখোলার শাখা নদীতে ৪০ বছর ধরে খেয়া পারাপার করে সংসার চালাচ্ছেন মরিয়ম বেগম (৫৭) নামে এক নারী। বাবার অভাবের সংসারে পেটের দায়ে কৈশোর বয়সেই নৌকার বৈঠা হাতে নিতে হয় তাকে। বিয়ের পর স্বামীও ঠিকমতো ভরণপোষণ না দেওয়ায় নৌকার বৈঠা তার হাত থেকে নামেনি।

২০ বছর আগে স্বামী হোসেন মাল তাকে ছেড়ে চলে যান। সেই থেকে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে চলছিল মরিয়মের জীবন সংগ্রাম। কিছুদিন আগে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর এখন ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন কীর্তনখোলার তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা রসুলপুর চরে।

মরিয়ম বেগম জানান, রসুলপুর চর জেগে ওঠার আগে থেকেই তিনি নৌকা চালান। এ কাজে তার বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই। অন্যের কাছে হাত না পেতে নিজে কাজ করে খাচ্ছেন। এটাই তার জন্য গৌরবের বিষয়।

তবে এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় কিছুটা ক্ষোভও রয়েছে মরিয়মের। তিনি বলেন, ‘৪০ বছর ধইরা এইহানে নৌকা চালাই, কিন্তু আইজ পর্যন্ত কোনো সরকারি সাহায্য পাই নাই। কেউ একটা টাহা (টাকা) দিয়া সাহায্য হরে (করে) নাই। টাহার অভাবে উপার্জনের একমাত্র সম্বল নৌকাডা হারতে (মেরামত করতে) পারছি না। ভোর ছয়ডা হইতে বিহাল (বিকেল) চারডা পর্যন্ত নৌকা চালাইয়া ২০০ থেকে ৩৫০ টাহা আয় হয়, হে দিয়া ঘরে বাজার সদায় হরমু, না ঘর ভাড়া দিমু, না নৌকা হারামু।’

মরিয়মের খেয়ার যাত্রী সফিক বলেন, প্রতিদিন এখান থেকে নদী পারাপার হই, কিন্তু ওনারে দেখলে আসলে খুব খারাপ লাগে। তারপরও একটা জিনিস দেখে ভালো লাগে যে উনি কারও কাছে হাত না পেতে নিজে কর্ম করে খান।

খেয়ার আরেক যাত্রী নাসরিন জাহান বলেন, নারী হয়ে জন্মানোই যেন এই সমাজে অপরাধ। যে কোনো সময় স্বামী ফেলে চলে যায়। বছরের পর বছর কোনো খোঁজ-খবর থাকে না। ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথায় কী করে চলে তা কেউ খবর রাখে না। অনেক কষ্ট করে জীবিকানির্বাহ করতে হয়। এই তো ওনাকেই দেখছি, গর্ভবতী অবস্থায় স্বামী ফেলে গেছে, পরে সেই গর্ভাবস্থায়ও নৌকা চালাইছে।

রসুলপুর চরের বাসিন্দা ফিরোজ আহমেদ বলেন, এখানে খেয়া পারাপারের কোনো নির্ধারিত ভাড়া নেই। দুই টাকা, পাঁচ টাকা যে যা দেয়। তবে মরিয়ম খালার নৌকায় উঠলে সবাই তারে পাঁচ টাকা করেই দেয়। কারণ, সে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এই চরের মানুষের জন্য নৌকা নিয়ে বসে থাকে। এই চরের বাসিন্দারাও সবাই তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে।

আরেক খেয়ার মাঝি জলিল মুন্সী বলেন, ‘মরিয়ম খালার জন্য এইখানে নৌকা সিরিয়াল দিয়ে চলে। সে যদি না থাকতো তাহলে আমরা যে যার মতো লোকজন ডেকে ডেকে পারাপার করতাম। সিরিয়াল না থাকলে তো সে লোক পেত না। তাই আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে তাকে চালিয়ে নিই। তবে সে যদি কোনো আর্থিক সহায়তা পেত তাহলে ভালো হতো। আমরা চাই, আপনাদের মাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে ওনার একটু সাহায্যের ব্যবস্থা হোক।’

মরিয়ম জানান, ছেলে নিয়ে রসুলপুর চরে একটি ভাড়া ঘরে থাকি। নিয়মিত সেই ঘরের ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হিমসিম খেতে হয়। এছাড়া মাঝে মাঝে অসুস্থ থাকলে তার ছেলেকে নৌকা নিয়ে নেমে পড়তে হয়। কারণ, একদিন নৌকা না চালালে সেদিন আর চুলা জ্বলে না তার ঘরে।

তিনি আরও জানান, নৌকাটা যদি একটু ভালো করে মেরামত করতে পারতেন তাহলে আর এত কষ্ট হতো না। সরকারের কাছে তিনি নৌকা মেরামতের জন্য সাহায্য ও থাকার জন্য একটা ঘর চান।

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসনের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, নারীর নৌকা চালানোর বিষয়টি নজিরবিহীন। আমরা ওই নারী মাঝিকে সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’

সর্বশেষ